একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বাগেরহাটের তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের বিষয়ে আসামিপক্ষের শুনানীর দিন ধার্য হয়েছে।
আগামী ১২ অক্টোবর আব্দুল লতিফ তালুকদার, শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার (কসাই সিরাজ) ও খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে শুনানির এ দিন ধার্য হয়েছে।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে প্রসিকিউশনের শুনানি শেষে এ দিন ধার্য করেন। অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সায়্যেদুল হক সুমন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিসে প্রসিকিউটর সায়্যেদুল হক সুমন ও শেখ মুশফিক কবির তাদের বিরুদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।
সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাগেরহাটের কচুয়ায় শাঁখারিকাঠি বাজারে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি মামলার আসামি। এদের মধ্যে সিরাজ মাস্টার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন এবং তিনি ‘বাগেরহাটের কসাই’ বলে কুখ্যাত।
বাগেরহাটের এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠণ ও ধর্মান্তরসহ ৯টি ভলিউমে ৫ খণ্ডে কেস ডায়েরি করে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। মোট আটটি মানবতাবিরোধী অভিযোগ একসঙ্গে দাখিল করা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে সিরাজ মাষ্টারের বিরুদ্ধে ছয়টি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে ৪টি করে অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী করা হয়েছে জব্দ তালিকার ৪ জনসহ ৬৮ জনকে।
তদন্ত চূড়ান্ত করে গত ২৫ আগস্ট এ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করেন তদন্ত সংস্থা। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত দল দীর্ঘ তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রসিকিউশন এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
তাদের বিরুদ্ধে ৯টি খণ্ডে মোট ৮শ’ ৪৪ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ৬৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানান তদন্ত সংস্থা।
ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কচুয়া থানা পুলিশ গত ১১ জুন পলাতক আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। গত ১৯ জুন অপর পলাতক আসামি আকরাম হোসেন খাঁনকে রাজশাহী থেকে মোড়েলগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করে। সর্বশেষ দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত ২১ জুলাই রাত ১১টায় বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশ বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে মৃত মোসলেম পাইকের (তার চাচা শ্বশুর) পরিত্যক্ত খুঁপড়ি ঘর থেকে সিরাজ মাস্টারকে গ্রেপ্তার করে।
তাদেরকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কচুয়ার শাঁখারিকাঠি বাজারে গণহত্যার শিকার রঘুদত্তকাঠি গ্রামের শহীদ জিতেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে নিমাই চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ২০০৯ সালে কচুয়া থানায় এ তিনজনসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।