র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৮) কাছে বৃহস্পতিবার সকালে আত্মসমর্পণ করা ফরিদ লাহারী ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরতে চান।
আত্মসমর্পণের আগে স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন ‘সুন্দরবনের দস্যু’ হিসেবে পরিচিত এ ব্যক্তি।
মংলার চিলা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রাসেল বাগেরহাট ইনফোকে জানান, ‘ফরিদ অল্প বয়সে হঠাৎ করেই দস্যুবৃত্তির পেশা বেছে নেয়। সম্প্রতি সে আমাকে বলেছে সে ভালো হতে চায়। তাকে সহযোগীতা করার জন্য। এখন তার লক্ষ্য দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা।’
ফরিদের প্রতিবেশীরাও বাগেরহাট ইনফো প্রতিবেদককে একই ধরনের তথ্য জানান। তারা বলেন, আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ফরিদ তার দস্যুতা ছেড়ে উপকূলের মানুষের সাথে মিলে জীবনকে বদলে ফেলতে চাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মংলার বৌদ্ধমারী এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ইউসুফ লাহারীর ছেলে ফরিদ। তিনি তার পরিবারের বড় সন্তান।
বৌদ্ধমারী প্রাইমারি স্কুলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ফরিদ সুন্দরবনের মুর্তুজা বাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরে বনদস্যু ‘রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী’তে যোগ দেয় সে। এরপর থেকে তিনি ‘টার্গেট’ হয়ে যান প্রশাসনের।
কিছুদিন পর ফরিদ একটি অস্ত্র মামলায় জেলও খাটেন। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি ফিরে যান বনের অভ্যন্তরে। সেখানেই গড়ে তোলেন ফরিদ বাহিনী।
সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানান, সুন্দরবনে প্রশাসনের প্রতিনিয়ত অভিযানে দস্যুরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।
সুন্দরবনের তিনজন র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মৃগমারি খাল সংলগ্ন এলাকায় দুর্ধর্ষ দস্যু ফরিদ বাহিনীর প্রধান ফরিদসহ ৩জন র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
পরে তাদের খুলনায় র্যাব খুলনা-৬ কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
র্যাবের প্রেস ব্রিফিং –
আত্মসমর্পণের পর খুলনায় র্যাব খুলনা-৬ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সুন্দরবনকে দু’টি ভাগে বিভক্ত করে র্যাব-৬ খুলনা এবং র্যাব-৮ বরিশালের যৌথ উদ্যোগে গঠিত টাস্কফোর্স’র অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে একটি বিশেষ টহল দল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে অবস্থান করছিল। এ সময় গোপন খবর আসে মিরগামারী খালের গহীন জঙ্গলে দস্যুদল ফরিদ লাহিড়ী গ্রুপও অবস্থান করছে।
বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে টাস্কফোর্স’র সদস্যরা তাদের ঘিরে ফেলেন। এক পর্যায়ে দস্যুরা আতংকিত হয়ে সোর্সের মাধ্যমে আত্মসমর্পণের কথা জানায়। টহল কমান্ডার র্যাবের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী জলদস্যুদের জঙ্গল থেকে বের হওয়ার জন্য মাইকে ঘোষণা দেন।
এক পর্যায়ে সাদা পতাকা উড়িয়ে বাহিনীপ্রধান ফরিদ লাহিড়ী, আসাদ শিকদার ও জুয়েল জমাদ্দার র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
ফরিদ বাহিনীর প্রধান ফরিদ লাহিড়ী মংলার বৌদ্ধমারী গ্রামের ইউসুফ লাহিড়ীর ছেলে। বাহিনীর সদস্য আসাদ শিকদার রূপসা উপজেলার নিকলাপুর গ্রামের মোঃ সোলায়মান শিকদারের ছেলে এবং অপর সদস্য জুয়েল জমাদ্দার মংলার জয়মনির ঘোল গ্রামের মোস্তফা জমাদ্দারের ছেলে। এরা সবাই দস্যুদল শীর্ষ বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে স্বীকার করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৮’র কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল ফরিদুল আলম বলেন, র্যাবের টাস্কফোর্স’র অভিযানে ইতিমধ্যে ১৪টি বাহিনী নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। দস্যুদের নেটওয়ার্ক তছনছ হয়ে গেছে। তারা আর বন বা লোকালয়েও টিকতে পারছে না। ফলে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে র্যাব-৬’র কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল এনামুল আরিফ সুমন বলেন, অভিযানে জুলফিকার, শীর্ষ ও ধলু বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা ক্রস ফায়ারে পড়ে মারা গেছে। এখনও যারা আছে তাদের গ্রেফতারে টাস্কফোর্সের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
এদিকে দস্যুবাহিনীপ্রধান ফরিদের আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়লে খুলনা, বাগেরহাট ও মংলাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় বাওয়ালী ও জেলেদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।