শাসন ও শোষণের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে।
বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষে একাত্তরের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবে চিরদিন।
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী ১৯৭১ এর ২রা মার্চ ঢাকা শহরে এবং পরের তিন দিন সমগ্র দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে ৩রা মার্চ থেকে হরতাল পালনের আহ্বান থকলেও খুলনা শহরে ২রা মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত ৫ দিন হরতাল পালন করা হয়।
হরতাল চলাকালে খুলনায় ৩ মার্চ সাত জন ও ৪ মার্চ আরো তিনজন সহ মোট ১০ জন প্রাণ হারান। ঐ হত্যাকান্ড খুলনা জেলার তৎকালীন মহকুমা শহর বাগেরহাটের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ দেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের অলিখিত ঘোষণা হিসেবে ধরে নেন।
এর প্রেক্ষিতে বাগেরহাটেও প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ৯ মার্চ, ১৯৭১ মঙ্গলবার গঠিত হয় বাগেরহাট সংগ্রাম কমিটি। স্বাধীনতার পক্ষের দলগুলো নিয়ে গঠিত সর্বদলীয় এ কমিটির নাম দেওয়া হয় ‘বাগেরহাট মহকুমা সংগ্রাম কমিটি’।
কমিটি যথারীতি তাদের কর্মসূচি প্রণয়ন করে এবং পরবর্তিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের কর্মকান্ডে অংশ নেয়।
প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করে ২৩ মার্চ, ১৯৭১ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঐ দিনকে ‘পাকিস্তান দিবসে’র পরিবর্তে ‘বাংলা দিবস’ হিসাবে পালনের ঘোষণা দেয়। ওই দিন দেশবাসীকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের আহ্বান জানান তারা।
মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঢাকা শহরের মিছিল-মিটিং গুলোতে দেখা যাচ্ছিল সবুজ জমিনের উপর লাল বৃ্ত্তের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা।
২৩ মার্চ বাগেরহাট মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পাতাকাটি ওড়ানো হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়।
- বাগেরহাটে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ৩০ মার্চ ১৯৭১ বাগেরহাটে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের সদস্য শেখ আবদুল আজিজের পুরতন বাজারস্থ বাসভবনে প্রথম সভার পর ৩ এপ্রিল বাগেরহাট হাই স্কুলে পরবর্তি সর্বদলীয় সভা হয়। সভায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে, লড়াই এর প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
৭ এপ্রিল, ১৯৭১ মেজর এম এ জলিল মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনার জন্য বাগেরহাট আসেন। ৮ এপ্রিল বাগেরহাট পৌরপার্কে (বর্তমান স্বাধীনতা উদ্যান) এক জনসভা অনু্ষ্ঠিত হয়। এর ক’দিনের মধ্যে ১১ এপ্রিল পাক সেনাবাহিনীর ৯জন বাঙালি সদস্য সুবেদের মুজিবের নেতৃ্ত্বে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বাগেরহাটে উপস্থিত হয়ে সংগ্রাম পরিষদে যোগ দেন। ঐ সময় ঢাকা ও রাজশহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারাও বাগেরহাট এসে সংগ্রাম পরিষদে যোগ দেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাগেরহাট প্রথম প্রবেশ করে ২৪ এপ্রিল ১৯৭১ শনিবার।
- বাগেরহাটে পাক-সেনাদের ক্যাম্প
মুক্তিযুদ্বের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক সেক্টরকে কয়েকটি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়। বাগেরহাট ছিলো ৯ নম্বর সেক্টরের অধীনে। ৯ নম্বর সেক্টরে বাগেরহাটে দু’টি সাব-সেক্টর ছিলো।
রাজাকার কমান্ডার রজ্জব আলীর নেতৃত্বে বাগেরহাটের একটি সুগঠিত রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এ খবরে পাকিস্তানি দোসর রাজাকারবৃন্দ অনুপ্রাণিত হয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প গঠন করে। বিভিন্ন স্থানে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ ঘটতে থাকে। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পেও রাজাকারদের হামলা ও পাল্টা হামলা চলতে থাকে।
জেলার (তৎকালীন মহকুমা) বিভিন্ন অঞ্চলে রাজাকার ক্যাম্পের বিস্তার ঘটায় সাধারণ মানুষের মাধ্যে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হত্যা, নির্যাতন থেকে গণহত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু মানুষ ভরতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে বাগেরহাটে গণহত্যার সূচনা হয়েছিলো। ১৬ ডিসেম্বরের পূর্ব পর্যন্ত ছোট বড় অর্ধশতাধিক গণহত্যার ঘটনা ঘটে তৎকালীন বাগেরহাট মহকুমায়।
- বধ্যভূমির গদ্য
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: ডাকরা গণহত্যা
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: শাঁখারীকাঠি গণগত্যা
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: বগী গণহত্যা
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: মঘিয়া বধ্যভূমি ও গণহত্যা
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: রামপাল বধ্যভূমি ও গণহত্যা
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: কান্দাপাড়া বাজার বধ্যভূমি
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: চিতলমারী বধ্যভূমি
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: দেপাড়া বধ্যভূমি
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: মুক্ষাইট বধ্যভূমি
- বাগেরহাটের বধ্যভূমি: বিষ্ণুপুর বধ্যভূমি