সোহেল; বয়স ১৯। প্রায় এক যুগ ধরে শিকল বন্দি ছেলেটি। কেন কি কারণে তাকে এভাবে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোহেলের মা বেলকা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, প্রায় বিশ বছর আগে গোপালগঞ্জ জেলার রাতুল গ্রামের মহিউদ্দিনের সাথে বিয়ে হয় তার।
মহিউদ্দিন তখন চিতলমারী টিএনটি অফিসে চাকরি করত। বেলকার মা ওই অফিসে ঝিয়ের কাজ করতেন। মায়ের সাথে আসা-যাওয়ার সুবাদে বেলকার সাথে মহিউদ্দিনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এ সময় মহিউদ্দিন নিজেকে বলে পরিচয় দেয় অবিবাহিত।
এক পর্যায় বেলকার সাথে মহিউদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এর পর একে একে ৪টি সন্তান জন্ম আসে তাদের ঘরে। সোহেল তাদের দ্বিতীয় সন্তান। ছোটবেলা থেকে সোহেল একটু বেশি বাপ সোহাগি ছিল। মায়ের চেয়ে বাপের প্রতি তার টান ছিল একটু বেশি রকমের। এক সময় মহিউদ্দিন চিতলমারী থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যায়। বউ বাচ্চাদের নেওয়ার কথা বলে আর ফিরে আসে না।
বাবাকে কাছে না পেয়ে আস্তে আস্তে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সোহেল। সুযোগ পেলে সোহেল বাবার খোঁজে ছুটে পালায়। কিছুদিন আগেও সে বাড়ি থেকে বাবার খেঁজে হারিয়ে গিয়েছিল। তাকে যশোর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ।
এ কারণে তাকে সবসময় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় বলে জানান বেলকা। বাবার নাম ধরে এখনো সে কান্নাকাটি করে। পাষণ্ড পিতা আর বউ-বাচ্চাদের কোন খোঁজ নেয়নি। বেলকা মহিউদ্দিনের গোপালগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে তার ঘরে আগের স্ত্রী সন্তান রয়েছে। সে বেলকার সাথে প্রতারণা করেছে। স্ত্রী’র অধিকার নিয়ে বেলকা মহিউদ্দিনের কাছে বার বার গেলে ও লম্পট স্বামী তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে বেলকা চিতলমারী ওয়াবদা ভেঁড়ি বাধের উপর একটি খুপড়ি ঘর বেঁধে সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন টাকা হলে সোহেলের চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু সোহেলের চিকিৎসার জন্য বেলকা অনেকের কাছে হাত পেতেও কোন সাড়া পাইনি। তাই এখন ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে সে তার সন্তানকে। সকাল হলেই বেলকা সোহেলকে ঘরের মধ্যে শিকল দিয়ে এভাবে বেঁধে রেখে লোকের বাড়িতে কাজে চলে যায়।