উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাগেরহাটের ফকিরহাটে আ’লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার সমর্থকদের সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে বিজিবি সদস্যসহ অন্তত ১৫ আহত হয়েছেন। এসময় ভোট কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ২টি ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে দেবার ঘটনায় স্থগিত করা হয়েছে একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাতসিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনার সূত্র পাতঘটে। এরপর থেমে থেমে প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলে সংঘর্ষ।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. নিজাম উদ্দিন মোল্লা জানান, বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার নিয়ামত হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুই সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটর সঙ্গে আ’লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার নিয়ামত হোসেন (মটর সাইকেল) ও তার সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। এর আগে ওই প্রার্থী বিজিবি এবং নির্বহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে খারাপ আচারণ করেন বলে জানা জায়।
এসময় বিজিবি সদস্যরা সরদার নিয়ামত হোসেনকে আটক কররে উত্তেজনা ঝড়িয়ে পড়ে। এ পর্যয়ে উত্তেজিতরা ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালট বাক্স ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
ঘটনার সময় পাশের বাগানের ভেতর থেকে পাঁচ-ছয়টি ককটেল বিষ্ফোড়নের শব্দ শোনা যায়। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কমপক্ষে ১০ রাউণ্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে বিজিবি সদস্যরা।
নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা নির্বাহী হাকিম আরিফুল ইসলাম বলেন, জামাল ও আজমল নামে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী দলবল নিয়ে রাস্তা আটকে ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধ প্রদান ও বিরক্ত করছিল। তাদের সরিয়ে দেয়ার সময় তারা বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে দু’জনকে আটক করা হয়।
“পরে সরদার নিয়ামত তাদের ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেন। তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় আমি নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবিকে ফাঁকা গুলি করার নির্দেশ দেই এবং চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৪ জনকে আটক করে নিয়ে আসি।”
তবে আ’লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার নিয়ামত হোসেন জানান, কেন্দ্র থেকে প্রায় ২শ’ গজ দূরে আওয়ামী লীগের সমর্থক হারুনুর রশিদ এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য জামানের মোটর সাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে সকালে বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে তাদের বাক-বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা তাদের লঠিপেটা করে আটক করে। এর জের ধরে এলাকার লোকজন রাস্তা অবরোধ করে।
“খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে হারুন ও জামানকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করি। তখন বিজিবি আমাকেও মারধর করে এবং থানায় নিয়ে যায়।”
এঘটনায় বিজিবি’র হাতে আটক চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়া অপর ৩ জন হলেন, স্থানীয় ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান জামাল (৪০), একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন (২৩) ও আওয়ামী লীগ কর্মী হারুন মল্লিক (৩৪)।
সাতসিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নজিবুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ চলছিলো। সংঘর্ষের পর এক দল দুর্বৃত্ত ওই কেন্দ্রে হামলা চালায়।
হামলার পর ভোটকেন্দ্রের কর্মকর্তারা একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। ওই সময় হামলাকারীরা দুটি ব্যালট বাক্সে ছিনিয়ে নেয় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মু. শুকুর আলী ও জেলা নিবার্চন কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৌল্লিক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ভোটকেন্দ্রে নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওপর হামলা এবং ভোটকেন্দ্রে বহিরাগত একজনকে গ্রেপ্তারের পর সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার নিয়ামত হোসেনসহ ৪ জনকে আটক করে।
এঘটনায় ঐ কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও পুড়িয়ে দেবার ঘটনায় সেখানে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করলেও ঘটনার প্রায় দুই ঘন্টা পর দুপুর ১ টার দিকে তাদের আটক ব্যক্তিদের পরে ছেড়ে দেয়া হয় বলে বলে পুলিশ সুপার মোল্লা নিজামুল হক জানান।
তিনি জানান, ঘটনার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আহত আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার নিয়ামতকে ফকিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।