আসন্ন ৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ক্রমশ বাড়ছে উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তর কোন্দল।
গেল ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এখানে আ’লীগ প্রর্থীদের প্রতিপক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই। এবার উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থী চুড়ান্ত করতে সবচেয়ে বেশী সংকটে পড়েছে দলটি।
সংসদ নির্বাচনে এমপি গ্রুপের প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন অপর দুই নেতা। তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার ও বিদ্রোহী প্রার্থী বলে দলীয়ভাবে অনেক সময় তিরস্কার ও কোন ঠাসা করে রাখা হতো।
কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে ভাইচ চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী বাছাই নিয়ে মূলস্রোত ধারা (এমপি গ্রুপ)’র মধ্যেই দেখা দিয়েছে চরম বিবাদ।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল মোরেলগঞ্জ উপজেলায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এরপূর্বে ১১ ফেব্রুয়ারি দলীয়প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বর্ধিতসভা ডাকে আওয়ামী লীগ।
বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মনিটরিং বোর্ড চেয়ারম্যান ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপির সভাপতিত্বে সভায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তৃণমূল নেতাদের মতামত নেওয়া হয়।
তৃণমূল নেতাদের ভোটে প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি এ্যাড. শাহ্-ই আলম বাচ্চু, ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আজমীন নাহার মনোনীত হন।
কিন্তু এ সভায় ভোটের এ ফলাফলের পরে বেকে বসেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এসএইচএম ছাবুল আখতার। অনেক আগে থেকেই তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য মাঠে কাজ করছিলেন। তার দাবি সে সময়ে তাকে দলের তরফ থেকে নিবৃত করা হয়নি বরং উৎসাহিত করা হয়েছিল।
অনেকের মতে, গেল সংসদ নির্বাচনেও ছাবুল আখতারের ওপর ভর করেই ডা. মোজাম্মেল হোসেন নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়েছেন।
মোরেলগঞ্জে আওয়ামী রাজনীতি টিকিয়ে রাখার বিষয়ে ছাবুল আখতারের অবদান অনেক এবং তিনি নিজেও বুনিয়াদী আওয়ামী পরিবারের সদস্য। এতসব অবদানের বিনিমিয়ে তিনি এখন ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দাবি করেন।
এই বিবাদই পরে বিবাদ রূপ নেয় সংঘাতে। এতে আহত হন শ্রমিক লীগ সভাপতিসহ কয়েক জন।লাঞ্চিত করা হয় এক যুবলীগ নেতাকে। সেই সাথে বন্ধ করে দেওয়া হয় তার ওষুধের দোকান ।
এসব ঘটনায় টানা দু’দিন তালা বন্ধ করে রাখা উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসও ।
এরপরে আবার কথা ওঠে, ছাবুল আখতারকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। দলের প্রার্থী হিসেবেই তিনি মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
বর্তমান সময় এবং বিগত দিনের এসব বিবাদের সূত্র ধরে চেয়ারম্যান পদে দু’জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন দলটি থেকে।
এদিকে এসব দ্বন্দ্বের অবসান না ঘটিয়ে দলের কার্যক্রম চলতে থাকায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।নিজেরাই লিপ্ত হচ্ছে সংঘাতে। ফলে আওয়ামী দুর্গখ্যাত উপজেলায় দিন দিন শক্তি হ্রাস পাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটির প্রভাব।
এদিকে এ সবের জন্য স্থানীয় আ’লীগের একটি অংশ দায়ী করছেন দলের মধ্যে থাকা রাজাকার-আলবদর ও রাজাকার পরিবারের সদস্যদের নেতৃত্বকে।
তারা সাংসদ ডা. মোজাম্মেল হোসেনকে ভুল বুঝিয়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা ছাবুল আখতারসহ অনেকেরেই নির্বাচনে আসতে দিতে চাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ছাবুল আখতারসহ বহু নেতাকর্মী। তাদের মতে, এমপি রাজাকার আলবদরদেরকে দলে প্রশ্রয় দিয়ে প্রকৃত নেতাকর্মী ও বুনিয়াদী আওয়ামী পরিবারের সদস্যদেরকে অবমূল্যায়ন করে চলছেন।
এমন অনেক কারণে গ্রুপিং, দ্বন্দের কারণে মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের পরিধি দিনদিন ছোট হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে পৌরসভাসহ গোটা উপজেলার উন্নয়ন কর্মকান্ড।