বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালে শ্রেণীকক্ষে ঢুকে এক শিক্ষার্থীর বাবার এলোপাতারি প্রহারে রক্তাক্ত জখম করেছে ছেলের পাঁচ সহপাঠী। এ সময় ঐ অভিভাবককে নিবৃত করতে গিয়ে লাঞ্চিত হয়েছেন শ্রেণীকক্ষে পাঠদানরত শিক্ষক।
ঘটনাটি ঘটেছে বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কার্ত্তিকদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ধর্ম ক্লাশ চলাকালে অবিশ্বাস্য এই ঘটনা ঘটে।
প্রহারে আহতরা হলেন কাজী লিমন (১৩), কাজী জিহাদুল ইসলাম (১৩), রাজন গাজী (১৩), ইসমাঈল শেখ (১৩) ও রিয়াদ (১৩)। এরা সবাই ঐ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র এবং প্রহারকারীর ছেলে তানজিমের সহপাঠী।
এদের মধ্যে কাজী লিমনকে রক্তাক্ত অবস্থায় সন্ধ্যায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী কাজী লিমন দাবি করেন, দুপুরে সহপাঠি তানজিম ও রাজন গাজীর মধ্যে মারামারি হয়। আমিসহ অন্যরা এই ঘটনার সাথে জড়িত না। কিন্তু তানজিম ও গোলাম গাজী নামে আর এক ছাত্র বাড়ি যেয়ে তানজিমের বাবার কাছে নালিশ করলে তানজিমের বাবা বিদ্যালয় মাঠে ফেলে তাকে প্রহার করেন।
পরে তিনি শ্রেণীকক্ষে এসে অন্যদের প্রহার করেন। এ সময় ধর্ম শিক্ষক বদরুজ্জামান পাঠদান করছিলেন বলে জানান লিমন।
স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং আহত শিক্ষার্থী জিহাদুলের বাব কাজী মারুফ হোসেন বলেন, তানজিমের বাবা আমার ছেলে (জিহাদুল)কে বিনা কারণে প্রহার করেছেন। খবর পেয়ে আমি বিদ্যালয়ে এসে দেখি তানজিমের বাবা চলে গেছেন। যা কিছুই ঘটুক না কেন কোন অভিভাবক এভাবে নিজে হিংস্রতা দেখাতে পারেন না। আমরা অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করতে চাই।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে প্রহারকারী গাজী মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে তানজিম ঐ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হবার পর থেকেই পাঁচ-ছয় জন সহপাঠী যখন তখন আমার ছেলেকে মারধর, উত্তক্ত করে। তাকে নিয়ে হাঁসাহাসি করে। ছেলে ক্লাশে যেতে চায় না। বাড়িতে এসে প্রায়ই কান্নাকাটা করে।’
‘আমি তাকে সব সময় শিক্ষকদের কাছে বিচার দিতে বলেছি। মঙ্গলবার দুপুরে ঐ ৫ ছাত্র জোট হয়ে তানজিমকে স্কুলে বসে প্রহার করলে ছেলে ক্লাশ ফেলে বাসায় এসে নালিশ জানায়।’
তিনি বলেন, ‘ছেলের কান্না দেখে আকস্মিকভাবে আমি উত্তেজিত হয়ে ছেলেকে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাই। মাঠের মধ্যে লিমন নামে এক প্রহারকারীকে আমার ছেলে সনাক্ত করলে আমি তাকে একটি চড় দেই। এতে তার নাক ফেটে রক্ত বের হলে আমার মন খারাপ হয়। আমি বিদ্যালয়ের পাঠাগারে যেয়ে শিক্ষকদের কাছে আমার ছেলের বিষয়ে নালিশ করে ফিরে আসি।
আমি কোন শিক্ষককে গালাগালি করিনি বা শ্রেণীকক্ষে ঢুকে কোন শিক্ষার্থীকে প্রহার করিনি বলিও জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুমুর রহমান জানান, ‘এসএসসি পরীক্ষার কারণে আমি মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে ছিলাম না। ধর্ম শিক্ষক বদরুজ্জামান এবং শরীরচর্চা শিক্ষক এনামুল হক ঘটনার সব থেকে বড় প্রতক্ষদর্শী। এনামুল ঐ শ্রেণীকক্ষের পাশে ষষ্ঠ শ্রেণীর ক্লাশ নিচ্ছিলেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক বিপুল কুমার সাহাও ঘটনা দেখেছেন। তানজিমের বাবা ছাত্রদের প্রহার করেছেন বলে জানালে আমি তা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে জানিয়েছি।
ঘটনা ও এর প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এস.এম. জাহিদ হাসান জানান, ‘আমি এলাকায় ছিলাম না। শুনেছি এক শিক্ষার্থীর বাবা ক্লাশে ঢুকে ছাত্রদের প্রহার করেছেন এবং শিক্ষকদের গালাগালি করেছেন। ঘটনা জানার পর আমি প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার অভিভাবক সমাবেশ ডাকতে বলেছি। সবাইকে নিয়ে আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করব।