সুন্দরবনের চাদপাই, দুধমুখি ও ধানমরি এলাকার উপকুল, মোহনা এবং সাগর জুড়ে বিস্তৃত ১২০ কিলোমিটার এলাকা Shetland (ডলফিন, তিমি ও পারপয়েস) বৈচিত্র্য ও প্রাচুর্যের কারণে “গ্লোবাল হটস্পট” হিসাবে চিহ্নিত করার পর এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিার জন্য ব্যতিক্রমধর্মী এক ডলফিন মেলা শুরু হয়েছে।
“আমাদের গর্ব আমাদের ডলফিন, সময় থাকতে রক্ষায় মন দিন” প্রতিপাদ্যে ডলফিন ও তিমি সুরক্ষায় পূর্ব সুন্দরবন এলাকার জেলে ও সাধারণ মানুষকে সচেতন মাস ব্যাপি ব্যতিক্রমধর্মী এ ডলফিন মেলার আয়জন করেছে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (WCS)।
ভাসমান নৌকায় ব্যতিক্রমধর্মী এ ‘ডলফিন মেলা’ এখন বাগেরহাটে। বাগেরহাট শহর সংলগ্ন ভৈরব নদীর মাঝিঘাটে এই প্রদর্শনীর শেষ দিনে ছিল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।
দির্ঘ্য দিন ধরে বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণে কাজ করে আসা সংস্থাটি সুন্দরবন এবং উপকুলীয় এলকার নদীতে শুশুক, ইরাবতি (এক প্রজতির ডলফিন) এবং তিমি সুরক্ষায় কাজ করেছে ।
WCS এর এডুকেশন ও রিচার্জ কোয়ার্ডিনেটর ফারহানা আক্তার বাগেরহাট ইনফো ডটমককে বলেন, শুধুমাত্র সুন্দরবন পূর্ব বন এলাকায় প্রতি বছর গড়ে অন্তত ২০ টি ডলফিন জেলেদের জালে বা চরে আটকে মারা যাচ্ছে। এছাড়া, জেলেদের জাল এবং সুন্দরবন ও উপকূলীয় সাগর এলাকায় পানিতে পরিবেশে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত এ স্তন্যপায়ী প্রাণী গুলোর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
ফারহানা আরও বলেন, ধারাবাহিক গবেষণায় মাধ্যমে তাদের প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তকে সুন্দরবন ও সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে, সংলগ্ন এলাকার গ্রামীণ মৎস্যজীবী, শিশু কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে সহজভাবে তুলে ধরাই এই এ প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য।
আয়োজকরা জানিয়েছেন ৬ ফেব্রুয়ারী মংলায় প্রদর্শনী মাধ্যমে শুরু হয় তাদের এ ‘ডলফিন মেলা’। রোববার রাতে প্রদর্শনী নৌকাটি বাগেরহাট ত্যাগ করবে। বাগেরহাটে তাদের প্রদর্শনী শেষে নৌকাটি জেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোল, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশালের তুষখালি হয়ে খুলনার গিয়ে শেষ হবে।
বাগেরহাট, বরিশাল এবং খুলনার সুন্দরবন ও উপকূলবর্তি মোট ১৫টি স্থানে স্বচেতনতা মূলক প্রদর্শনীটি আগামী ২ মার্চ খুলনায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে শেষ হবে।
ব্যাতিক্রমী এই কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে রোববার বিকেলে বাগেরহাট ইনফো ডটমক এর সাথে কথা বলেন প্রকল্পের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পরিচালক এলিজাবেথ ফাহর্নি মানসুর।
এসময় তিনি বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, ১০ বছরেরও বেশী সময় ধরে তারা সুন্দরবনসহ বঙ্গোপসাগর উপকূলে শুশুক (স্থানীয় ভাষায় ঠোষ), ইরাবতি (এক প্রজতির ডলফিন) এদের নিয়ে গবেষণা করছেন। ভাসমান নৌকায় তাদের এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতন করার পাশাপাশি জেলেদের প্রশিক্ষন দিচ্ছেন তারা।
এর মাধ্যমে জেলেদের জানান হচ্ছে এধরণের প্রণী কোন মাছ নয়। এসব প্রাণী আমাদের মতন স্তন্যপায়ী। শুশুক, ইরাবতিরা নদীর ডলফিন। এরা মানুষের মত বাচ্চা জন্ম দেয়, মা বাচ্চাকে দুধ পান করায় ও লালন পালন করে।
এলিজাবেথ বলেন, তারা তাদের এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সুন্দরবন এবং সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের প্রশিকক্ষনের পর তাদের কাছে জিপিএস ডিভাইজ তুলে দিচ্ছেন। যা দারা বিভিন্ন সময় জেলেরা তাদের নিজেদের নিরাপত্তার পাশাপাশি বিপদাপন্ন ডলফিন ও তিমি সুরক্ষয় কাজ করবে।
শিক্ষার্থীদের সাথে সরজমিন ভাসমান এ প্রদর্শনী কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে রয়েছে ডলফিনের কংকাল, দাঁত, ছবির মাধ্যমে ডলফিন ও তিমি চেনার উপায়, বিভিন্ন ধরনের ডলফিনের প্রতিকৃতি, ডলফিন রক্ষায় করণীয় বিষয়ক মতামত।
সুন্দরবনে ডলফিনের ৩টি অভয়ারণের মানচিত্র, মানুষের সাথে স্তন্যপায়ী এই প্রাণীর সম্পর্ক ও সাদৃশ্য বিষয়ক তথ্যচিত্র। এদের জীবনযাত্রা ও উপকারী কার্যক্রম বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য।
দিন ব্যাপি শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল প্রদর্শনী। এসময় দর্শনার্থীদের পুরো আয়জনে ঘুরে দেখার পাশাপাশি তাদের কে ব্রিফ করেণ সোসাইটির সদস্যরা। মেলায় আসা শিক্ষার্থীদের মাঝে এসময় বিনামূল্যে প্রদান করা হয় সচেতনামূলক লিফলেট ও বই।
মেলা দেখতে আসা বাগেরহাট সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কৌশিক দাস আকাশ বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, মেলায় আসতে পেরে ভিষন খুশি আমি। এখানে এসে নতুন নতুন অনেক তথ্য জানতে পেরেছি। যা আগে আমি জানতাম না।
যেমন ডলফিন পানির নিচে বসে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারেনা। পানির উপরে উঠে ডলফিনকে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হয়। ডলফিন, শুশুক যে মাছ নয় তাও আজ আমি এখনা থেকে জানতে পেরেছি।
শহরের জাহানাবাদ বালিকা বিদ্যলয়ের ৭ম শেনীর শিক্ষার্থী নুসরাত আক্তার এবং ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তুলি আক্তার বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, এখানে এসে আমারা জানতে পেরেছি সাগর থেকে বিভিন্ন সয়ম ডলফিন আমাদের পাশে থাকা ছোট ছোট নদী-খালে ঢুকে পড়ে। অনেক সময় ডলফিন এসব নদীতে মাছ ধরার জালে ধরা পড়ে মারা যায়। এসব ডলফিন, শুশুক শিকার দন্ডনীয় অপরাধ।
জেলেরা যাতে ডলফিন শিকার না করে সে বিষয়ে আমাদের ও অন্যদের সচেতন করতে এখান কার ভাইয়া এবং আপুরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রকল্পের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পরিচালক এলিজাবেথ ফাহর্নি মানসুর বাগেরহাট ইনফোকে এই প্রদর্শনীতে শিক্ষার্থী এবং জেলেদের ব্যাপক সম্পৃক্ততার সন্তোষ প্রকাশ করে সকলকে এ বিষয়ে আরও সচেতন অবার জন্য আহ্বান জানান।
বিলুপ্ত এই ডলফিনকে রক্ষা করতে সকলকে সচেতন হবার পাশাপাশি কোথাও মৃত বা আটকে পড়া ডললিন সম্পার্কে জানলে তাৎক্ষনিক ০১৬১২ ২২৮ ৮০০ এবং ০১৭১৩ ২২৮ ৮০০ নম্বরে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেণ আয়োজকরা।
এছাড়া এই প্রকল্প সম্পার্কে আরও জানতে তাদের ওয়েবসাইট- www.shushuk.org ভিজিট করতে অনুরোধ করেছেন সোসাইটির সদস্যারা।