সুন্দরবনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গত ২ বছরে ৪২ বন ও জলদস্যু নিহত হয়েছে। এ সময় উদ্ধার হযেছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র। এরপরও বেপরোয়া সুন্দরবনের দস্যুরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা নুতন নতুন বাহিনী গঠন করে সুন্দরবনে চালিয়ে যাচ্ছে তাণ্ডব।
উপকূলে কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পরও গোটা সুন্দরবন অঞ্চল ও সাগর উপকূল এলাকার লক্ষাধিক জেলে বছরের পর বছর ধরে দস্যু বাহিনীগুলোর হাতে জিম্মি। এ অবস্থায় মৎস্য সেক্টর ও বন্যপ্রাণি নিধন এখন নিত্য-নৈমেত্তিক ঘটনায় দাঁড়িয়েছে।
জেলে, ট্রলার মালিক ও আড়তদার সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন উপকূলে মোর্তুজা বাহিনী, রাজু বাহিনী ও জুলফিকার বাহিনীসহ ১৪টি বন ও জলদস্যু বাহিনী সুন্দরবনে ট্রলার ও নৌকাপ্রতি চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়। যদি কোনো জেলে তাদের দাবি উপেক্ষা করে তাহলে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে।
জেলেরা জানান, মাছধরা ট্রলারগুলোতে হামলা চালিয়ে বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকারও বেশি মাছ, জাল, জ্বালানি ও টাকাসহ মালামাল লুট করেছে জলদস্যুরা।
বাগেরহাট মৎস্য আড়তদার সমিতির সেক্রেটারি অরূপ কুমার জানান, সুন্দরবনে কুখ্যাত বনদস্যু বাহিনীর প্রধান রাজু প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণের দাবি জানিয়ে কিছুদিন দস্যুতা কার্যক্রম বন্ধ করলেও সরকারি কোনো উদ্যোগ না পেয়ে আবার জঙ্গলে গিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সে ও তার বাহিনী।
জানা গেছে, গত ২ বছরে বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, র্যাব ও কোস্টগার্ডের সাথে বন্দুকযুদ্ধে বনদস্যু ‘গামা বাহিনী’র চার সদস্য, মোড়েলগঞ্জে বনদস্যু সোহরাব বাহিনী প্রধান সোহরাব, বনদস্যু মুকুল বাহিনীর নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বাহিনী প্রধান মুকুল, কয়লা খোকন, কবিরসহ পাঁচ দস্যু, জিহাদ বাহিনীর কিবরিয়া ফকির, রাজু বাহিনীর সেকেন্ড-ইন কমান্ড মান্নান ও সদস্য মাসুদ, রাজু বাহিনীর সদস্যসহ চার বনদস্যু, বটিয়াঘাটার নাসির, জুলফিকার বাহিনীর প্রধান জুলফিকার ওরফে জুলফুসহ চার জন, চরদুয়ানীর বলেশ্বর নদীর মোহনায় রাজু বাহিনীর তিন সদস্য, ডিমের চর এলাকায় রাজু বাহিনীর দুই দস্যু, রফিক বাহিনীর প্রধান রফিক মাস্টার ও আবু হানিফ, রামপালের সায়েদ শিকদার ও শেখ আসাদ নিহত হয়। এরপরও থেমে নেই বনদস্যুদের তাণ্ডব, অত্যাচার ও নির্যাতন।
সর্বশেষ ১৮ জানুয়ারি বনদস্যু মর্তুজা বাহিনীর গুলিতে দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন আহমেদ আহত হন।
এরপর থেকে কোস্টগার্ড সুন্দরবনের ভদ্রা ও চরাপুটিয়া এলাকায় বনদস্যুদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। তবে এ অভিযানে বড় ধরনের কোনো সফলতা দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ এ বিষয়ে সতর্ক আছে। সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুন্দরবন অঞ্চলে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন আছে। সুন্দরবনে দস্যুদের তৎপরতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।