২৪০ কিলোমিটার গতির ঘূর্ণিঝড়। ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। সাড়ে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু। ৫৫ হাজার মানুষ আহত। ৮৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাত। কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের উপকূলীয় ১১ জেলা।
সিডর নামের সেই ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আঘাত হেনেছিল বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদ দিয়ে। তারই পার্শ্ববর্তী উপজেলা মংলার চিলা ইউনিয়ন। সেই দিন বিকেলে শত মানুষের সঙ্গে জীবন বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটেছেন সাথী সরকার ও জর্জি সরকার। সাথী সরকার অন্তঃসত্ত্বা। স্থানীয় সেন্ট মেরিস গির্জাসংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয় তাঁদের।
সেই ঘোর দুর্যোগের রাতে ভোরের আলো ফোটার আগমুহূর্তে জন্ম নিল এক শিশু। ঝড়-ঝঞ্ঝাকে পরাস্ত করে টিকে থাকা উপকূলবাসীর সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠল সেই শিশু। সাথী দম্পতি তার নাম রাখলেন সিডর। সিডর সরকার।
দেখতে দেখতে ছয় বছর পার করে সাত বছরে পা দিয়েছে সেদিনের ছোট্ট সিডর। এ বছর শিশু শ্রেণী থেকে সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়ে প্রথম শ্রেণীতে উঠেছে সে। তবে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাত সয়ে পৃথিবীর মুখ দেখলেও দারিদ্র্য নামক ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে তাকে।
সিডরের দাদি রিভা সরকার (৫৫) গতকাল মঙ্গলবার আবার প্রথম আলোকে গর্ব করে বললেন, সিডর ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড় থেমে যায়। কিন্তু জীবনের ঝড় মাথায় নিয়েই সিডরকে এখনো এগিয়ে যেতে হচ্ছে। সিডরের বাবা জর্জি সরকার (৩১) ও মা সাথী সরকার (২৬) বছর দুই আগে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছেন।
সিডর এখন থাকছে দাদির কাছে। সে এলাকার দিশারী শিশু শিক্ষানিকেতনে পড়ে। সাথী দম্পতি মাস শেষে যে টাকা পাঠান, তা দিয়ে চলে সংসার ও সিডরের পড়াশোনা।
সিডরের দাদা রঞ্জিত সরকার সুন্দরবনে মাছ ধরেন। আয় তেমন নেই। দাদা বললেন, তিন বছর ধরে সিডর কানের যন্ত্রণায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। টাকার অভাবে বড় ডাক্তার (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক) দেখাতে পারছেন না।
গতকাল শেষ বিকেলে রঞ্জিতের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, সিডর উঠানে খেলছে। বড় হয়ে কী হবে—প্রথাগত এই প্রশ্নে ছোট্ট সিডর খেলতে খেলতে উত্তর দেয়, ‘মানুষ হব।’ তারপর কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, ‘ফাদার হব। মানুষের সেবা করব।’
সুমেল সারাফাত, মংলা (বাগেরহাট)।
সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো।