বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না- বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ শরণ।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে- প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।
বুধবার বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। কারণ এই প্রকল্পে পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে বিভিন্ন সতর্কতা নেয়া হবে। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে কাজ করছেন।”
দুপুরে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের সাপমারী-কাটাখালী এলাকায় কয়লাভিত্তিক এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করতে আসেন রাষ্ট্রদূত। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন, ভারতের বিদ্যুৎ সচিব পুজা সংকর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গহর রিজভী, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক এ ইলাহী, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, পিডিবির চেয়ারম্যান ওহাব খাঁন, বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট এর এমডি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিসহ ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ভারতের বিদ্যুৎ সচিব পুমা শংকর বলেন, যে পদ্ধতিতে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে দূষণ মাত্রা খুবই কম হবে। ফলে সুন্দরবনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, এই প্রকল্প দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে দেবে। বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণসহ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি।
সকাল ১১টায় মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জলযান ঝিনুকে করে কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকায় যান এবং পরিদর্শন শেষে বেলা আড়াইটা নাগাদ মংলায় ফিরে আসেন।
মংলা সমুদ্র বন্দরের কাছে এক হাজার ৮৩৪ একর জায়গার ওপর এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি হয়। এখন প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। ২০১৬ সালের মধ্যে এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে পিডিবি জানিযেছে।
এদিকে পরিবেশবাদীদের বক্তব্য, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে রামপাল ও সুন্দরবনের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তাই তারা এ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন।
উল্লেখ, চুক্তি স্বাক্ষরের ঠিক দুদিন আগে আইন ও সালিশ কেন্দ্রর নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানসহ ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ বাতিলের আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতি দেন।
ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অন্য কোথাও স্থান নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, এখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।
এরপর থেকেই তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।