উপকুলিয় জেলা হওয়াতে নদ-নদী আর খার বিলের সংখ্যা অনেক বেশি বাগেরহাটে। কিন্তু বর্তমানে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ১১টি নদী ও প্রায় দুই শতাধিক খাল পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে জোয়ার-ভাটা প্রবাহমান না থাকায় মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে এসব নদী-খাল। পলিমাটি জমে গড়ে প্রতি বছর ভরাট হচ্ছে এই অঞ্চলে ০.৫ থেকে ১.৫ মিটার নদী।
এরই মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে বাগেরহাটের উপর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন নদী-খালের ৭০০ কিলোমিটার এলাকা। ফলে পানি স্বল্পতার কারণে এসব নদী-খালে নৌ যোগাযোগ অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্ষা মৌসুমে কিছুটা নাব্যতা থাকেও শীত বা গ্রীষ্মে এখন অস্তিত্বহীন জেলার অধিক অংশ নদ-নদী ও খাল। ফলে বাধ্যই হয়ে মৎস শিকার ও কৃষির সাথে সম্পৃক্ত এ অঞ্চলের বহু মানুষ এখন বেকার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা সদর, রামপাল ও মংলা উপজেলার বিভিন্ন এালাকায় প্রভাবশালীরা প্রবাহমান খালে বাঁধ ও ঘের দিয়ে চিংড়ি চাষ করায় এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক খাল ভরাট হয়ে সমতল ভূমিতে পরিনত হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয় বোর্ডের তথ্য মতে, গত ১০০ বছরের মধ্যে বাগেরহাটে ভোলা নদীর একাংশ ছাড়া আর কোনো নদী খনন না করায় দ্রুত এসব নদী-খাল ভরাট হতে থাকে। এসব নদীতে এক সময়ে জোয়ার-ভাটা প্রবাহমান ছিল এবং চলাচল করত বড় বড় নৌযান। যোগাযোগ সহজতর করতে সরকার দাউদখালী ও পুটিমারী নদীর ওপর কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ব্রিজ নির্মাণ করে। কিন্ত দ্রুত পলিমাটি জমে নদী ভরাট হয়ে গেছে। এখন মানুষ পায়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছেন।
পলিমাটি জমে ভরাট হওয়া ১১টি নদী হচ্ছে- দাউদখালী, বিষনা, পুটিমারি, আঠারোবেঁকি, চিত্রা, ভৈরব, ভোলা, বলেশ্বর, কুমারখালী, কাটা ভৈরব ও পুরাতন পশুর। এছাড়া প্রতি বছর যে হারে পলি জমছে তাতে করে আগামি ১০ বছরের মধ্যে দড়াটানা, মধুমতি ও পানগুছি নদী ভরাট হওয়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বিভাগ।
বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান জানান, ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা ও গড়াইসহ বিভিন্ন নদী এবং বিভিন্ন শাখা প্রশাখা ও খালে পানি প্রবাহ কমে গেছে। জোয়ারে যে হারে পানি প্রবেশ করছে ভাটার সময় সেই হারে পানি নামতে না পারায় পলিমাটি জমে নদী-খাল ভরাট হচ্ছে। ১৯৮০ সাল থেকে এই অঞ্চলে নদী-খাল ভরাট হতে শুরু করে। নদী-খাল ভরাটের মাত্রা এখন তীব্র আকারধারন করেছে।
ভরাট হওয়া নদী-খাল খননের জন্য ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৪/২ ও ৩৬/১ নামে দুটি প্রকল্প গহণ করা হয়েছে এবং প্রকল্প দুটি বস্তাবায়ন হলে নদী-খাল খনন করা হবে আশ্বাস দেন ওই নির্বাহী প্রকৌশলী।
এব্যাপারে বাগেরহাট জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হীরেন্দ্র নাথ হাওলাদার জানান, নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে কৃষি জমি থেকে পানি নিষ্কাশন না হওয়ার প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা মুল্যের ধান ও সবজী নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া লবণাক্ততার কারণে বাগেরহাট অঞ্চলে ধানসহ অনান্য কৃষি ফসল উৎপাদনে দির্ঘ্য মেয়াদি বিপর্যের আশংকা সৃষ্টি হচ্ছে।
এব্যাপারে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মু. শুকুর আলী দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিান বলেন, কোনো ভাবেই প্রবাহমান সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে কেউ চিংড়ি চাষ করতে পারবে না। যদি কেউ খালে বাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষ করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে খালের অবৈধ বাঁধ চিহ্নিত করে অপসারণের জন্য সংশিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
তবে আশ্বাস বা প্রতিশ্রতি নয় সরকারের কাছে বাগেরহাটবাসী প্রত্যাশা এসব খালের বাঁধ অপসারণ এবং নদী-খাল খননের মাধ্যমে আবারও তার প্রভাহ নিশ্চিত করা। আর এর ফলে বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের জলাবদ্ধা অনেক অংশে নিরসর হবে হলে তাদের দাবি।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।