সেই ভয়াল ২৯ নভেম্বর! ১৯৮৮ সালের এ দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
সমুদ্র্রে জলরাশির সঙ্গে বাতাসের তীব্রতা এই জনপদকে বিধ্বস্ত করে দেয়। নিশ্চিহ্ণ হয়ে যায় মানুষের ঘরবাড়ীসহ সকল সহায়-সম্পদ। বঙ্গোপসাগরের ডুবে যায় সহস্রাধিক মাছধরা ট্রলার, নিঁখোজ হয় হাজার হাজর জেলে।
ভয়াল সে তান্ডবের কথা স্মরন করে এখনও আঁতকে ওঠে বাগেরহাটসহ উপকুলীয় এলাকার মানুষ। প্রকৃতির রুদ্র খেয়ালে ক্ষত-বিক্ষত স্মৃতি বুকে নিয়ে সেদিনের স্বজনহারা মানুষ আজও এ দিনটি কে স্মরণ করছে।
সেদিন হঠাৎ করেই ক্ষেপে যায় প্রকৃতি। মুহূর্তেই প্রবল ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর নির্মম হিম শীতল পরশ আলিঙ্গন করে এই জনপদের কয়েক হাজার মানুষকে।
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী চিত্রল হরিণসহ শত শত গবাদী পশুও রেহাই পায়নি সেদিন। সর্বত্র মৃত দেহের বীভৎস দৃশ্য আজও তেড়ে বেড়ায় উপকূলের জনপথ গুলোর মানুষের হৃদয়।
দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যতম পতিতাপল্লী বানিশান্তার যৌনকর্মীরা সেদিন আপ্রাণ চেষ্টা করেও লোকালয় আশ্রয় পায়নি। প্রবল জলের স্রোতে ওই নিষিদ্ধ পল্লীর ১৬০জন যৌনকর্মী বাঁচতে পারেনি।
সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর দ্বীপ দুবলা, আলোরকোল, চর মেহেরআলী, জেলের ট্যাক ও মাঝের চরে অবস্থানরত প্রায় ১০ হাজার জেলের কেউ বাঁচতে পারেনি।
মানুষ আর পশুর লাশ একাকার হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সাগর আর নদীর জলরাশিতে। অনেক জেলের লাশ সেদিন বাধ্য হয়ে মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল সমুদ্রে জেগে ওঠা চরে।
সেই থেকে জেলেরা চারটি চরের নাম দিয়েছে ‘মরন চর’।
আজ পূর্ন হচ্ছে ভয়াল প্রলংকারী ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছাসে ২৫ বছর। ইতিহাসের নির্মম এ ঘটনার পর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত জেলেদের নিরাপত্তার জন্য সরকারিভাবে চরে ৫টি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
জেলেদের আগাম সর্তক বার্তা দিতে স্থাপন করা হয়েছে মৌসুমী পূর্বাভাস কেন্দ্র। প্রতিবছর অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত দুবলারচরে জেলেদের ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।