শরণখোলা (বাগেরহাট) :: খাদিজা বেগম (৪০)। বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায়। রাস্তায় মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করে কোনোমতে সংসার চলে তার।
সহায় সম্বল বলতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১/১ পোল্ডারের ভেড়িবাঁধের পাশে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর স্বামী পরিত্যাক্তা খাদিজার। আর নিজের এই শেষ আশ্রয় টুকু বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খাদিজা।
জানা গেছে, উচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাক (ইউএনও) তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু রক্ষা করতে বাস্তুহারা খাদিজা এখন তার একটি কিডনি বিক্রি করতে চান।
সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের নলবুনিয়া গ্রামের মৃত আ. মজিদ হাওলাদারের মেয়ে সহজ সরল সাক্ষরজ্ঞানহীন খাদিজা বেগম উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় খেলার মাঠসংলগ্ন বেড়ি বাঁধের পাশে একটি ঝুঁপড়ি ঘর তুলে ২৫-৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন। এলজিইডির তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী স্বামী আ. রাজ্জাক তাকে ছেড়ে চলে যান ৪-৫ বছর আগে।
দুই মেয়ের মধ্যে বড় জনের বিয়ে হয়েছে আর ছোট মেয়েটি এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী।
এলজিইডির আরইআরএমপি প্রকল্পে শ্রমিকের কাজ করে মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চলে তার। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম মামুন উজ্জামান খাদিজাসহ বেড়িবাঁধের পাশের বসবাসরত ১০-১২টি ভূমিহীন পরিবারকে এক সপ্তাহর মধ্যে তাদের ঘর ভেঙে নিয়ে জায়গা খালি করতে বলেন।
ওয়াপদার ওই জমিতে ইউএনও শিগগিরই পরিকল্পিত মার্কেট নির্মানের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়ে দেন তাদেরকে। আর যদি ওই জমিতে থাকতে হয় তাহলে প্রত্যেককে তিন লাখ করে টাকা দিতে হবে।
ইউএনও’র ওই কথা শোনার পর তিন লাখ টাকা জোগাড় করার জন্য অসহায় খাদিজা বেগম রোববার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন তার একটি কিডনি বিক্রি করতে।
উপজেলা বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা হাসপাতালে কিডনি কেনা হয়না জানালে, ৩ লাখ টাকার জোগাড়ে বিনিময়ে একটি কিডনি বিক্রির জন্য বিত্তবানদের কাছেও গিয়েছেন।
সবশেষ তিনি কিডনি বিক্রির খবর প্রকাশের আবেদনও জানান প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের কাছে।
এদিকে, খাদিজার কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্তের কথা জানাজানি হলে ইউএনও ও তার ক্যাডাররা তার ঘর ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
খাদিজা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, এক সপ্তার মইদ্যে ৩ লাক টাহা (টাকা) দেতে না পারলে টিওনো (ইউএনও) মোর ঘর ভাইঙ্গা দেবে। মুই এ্যাহন তিন লাক টাহা কোতায় পামু। রাস্তায় কাম হইর্যা যে কয়টাহা পাই হেয়া দিয়ার খাওনই অয়না। হের পর ছোড মাইয়াডার লেহা পড়ার খরজ।
এলাকার সবাই জানে ২৫-৩০ বছর ধইর্যা মুই এইহানে থাহি। ঘর ভাইঙ্গা দেলে বয়েস্তা মাইয়া লইয়া কোতায় থাকমু।
হাসপাতালে গেছিলাম একটা কিডনি বিক্রর লইগ্যা। ডাক্তার কইছে এহানে কিডনি বিক্রি অয়না। আমনেরা মোর একটা কিডনি বেচার ব্যবস্তা হইর্যা দ্যান। মোর ঘরডা যানি না ভাঙ্গে। নইলে মুই বিষ খাইয়া মরমু।
এসময় তার আর্তির কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন খাদিজা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার সাহা বাগেরহাট ইনফোকে জানান, রোববার দুপুরে (৩ নভেম্বর) খাদিজা বেগম নামের এক মহিলা আমার চেম্বারে এসে কান্নাকাটি করছিলেন। তিনি নাকি তার একটি কিডনি বিক্রি করবেন। আমি বলেছি আমার কাছে কিডনি কেনাবেচা হয়না। ইউএনও সাহেব নাকি তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেছেন বলে জানান তিনি।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তার এক বৈঠকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসের ব্যবস্থা করে তাদেরকে উচ্ছেদের কথা হয়েছিল। কিন্তু পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করাটা অমানবিক।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম মামুন উজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, আমি একটি নতুন স্কুল করছি। স্কুলের আয়ের জন্য ওই জায়গায় মার্কেট নির্মান করা হবে।
একারণে খাদিজাসহ সেকার অন্যদেরকে তাদের ঘর সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে, তাদের কাছে কোনো টাকাপয়সা চাওয়া হয়নি বলে এসময় তিনি দাবি করেন।
০৪ নভেম্বর ২০১৩ :: মহিদুল ইসলাম,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এসআইএইচ-নিউজ এডিটর/বিআই