তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চায়ের দোকানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই কর্মীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটে দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা–ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসময় সংর্ঘষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে গুরুতর জখম ৩ আওয়ামী লীগ নোতকর্মীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বাকিদের বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, চিতলমারী উপজেলা হাসপাতাল ও স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল (রোববার) রাত আনুমানিক পনে ৮টার দিকে সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুকোড়ামারা গ্রামের ওসমান শেখের চায়ের দোকানে হামলার ঘটনা এঘটনার সূত্রপাত ঘটে।
পরে আওয়ামীগের কর্মীরা জড়ো হয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে কু-কোড়ামারা গ্রামের ৭টি বসত বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও গনলুটপাট চালায় বলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো দাবী করেছে। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বিকার করেছে।
এলাকাবাসী জানায়, রোববার রাতে স্থানীয় চিরুলিয়া স্কুল এন্ড কলেজে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী সভা শেষে ফেরার পথে কু-কোড়ামারা গ্রামের ওসমানের চায়ের দোকানে স্থানীয় আওযামীলীগ নেতা হুমাউন ও বিএনপি কর্মী একরামুলের সাথে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির কর্মী একরামুলসহ বেশ কয়েকজন জড়ো হয়ে চায়ের দোকানে অবস্থানরত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হমাউনের ওপর চড়াও হয়।
পরে হুমাউন কয়েকজন সমর্থক নিয়ে পুনরায় চড়াও হবার চেষ্টা করলে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা একজোট হয়ে তাদের ওপর হামলা করলে। এতে আহত হয়েছে সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মো. মুকুল সরদার, যুবলীগের সদস্য সেকেন্দার মলিক(৫০), উপজেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি হুমায়ুন শেখ, ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল খান(৩০), ছাত্রলীগের সহসভাপতি জিহাদ জমাদ্দার, শিহাব (১৭), ইসরাফিল (২২), আফজাল শেখ (১৭)।
পরে আওয়ামী লীগের কয়েক’শ নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়ে কু-কোড়ামারা গ্রামের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতদের ৭টি বসত ঘর ও কয়েকটি দোকান ভাংচুর, মটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে।
এসময় হামলা ও লুটপাটের শিকার হয় কু-কোড়ামারা গ্রামের খবির উদ্দিন, আতিয়ার রহমান, আব্দুল হাই, মিজানুর রহমান, আব্দুল কাদের, ওসমান, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, ওমর ডাক্তারের বাড়ী এবং কয়েকটি দোকান ঘর। এ সময়ে কয়েকটি বাড়িতে মহিলাদের মারপিট করে নগদ অর্থ, স্বর্ণালাংকার, মটর সাইকেল, বাই সাইকেলসহ মালামাল লুটের ঘটনা ঘটে বলে জানান তারা।
হামলা ও লুটপাটের শিকার স্থানীয় বিএনপির সর্মথক খবির উদ্দিন বাগেরহাট ইনফোকে জানান, রাত ৮ টার দিকে সদর আসনের এমপি মীর শওকাত আলী বাদশার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ফিরোজুল ইসলাম ফিরোজের নেতৃত্বে পরবর্তিতে হামলা শুরু হয়। এতে কয়েক শত সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র হাতে রাস্তার পাশে অবস্থিত তার বাড়িতে ঢুকে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে। এসময়ে তিনি বাধাঁ দিলে সন্ত্রাসীরা তাকে বেধড়ক মারপিট করে আহত করে ।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বাবু বাগেরহাট ইনফোর কাছে অভিযোগ করে বলেন, সদর আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় এমপির পিএস ফিরোজের নেতৃত্বে রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় মহিলাসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
তবে এবিষয়ে এমপির পিএস ফিরোজুল ইসলামের সাথে কথা বললে তার বিরুদ্ধে সকল অভিয়োগ অস্বীকার করে তিনি বাগেরহাট ইনফোকে জানান, সংর্ঘষের পর রাতে আহত আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরন উদ্ধেশে তিনি সেখানে যান।
বাগেরহাট সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসময় বিক্ষুব্ধরা দুটি মটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল কবীর চৌধুরী বাগেরহাট ইনফোকে জানান, গতকাল রাতে মুকুল নামের এক ব্যক্তির মটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় বিক্ষুদ্ধ আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা ওই এলাকার বেশ কয়েকটি বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের ঘরবাড়ী, দোকান দোকানপাট ভাংচুর করে বলে দাবী করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
তিনি আরও জানান, এঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সংঘর্ষে জড়িত থাকর অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষনিক তাদের নাম জানাতে পারেন নি তিনি।
২১ অক্টোবর ২০১৩ :: ইনজামামুল হক,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এসআইএইচ– নিউজ এডিটর/বিআই