সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেত আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে শুরু হয় লংমার্চের সমাপনী সমাবেশ। আর বিকেল ৫টার দিকে সুন্দরবন ঘোষণাপত্র পাঠ শুরু করেন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
ঘোষণাপত্রে তিনি বলেন, রামপাল প্রকল্প সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোটিমটার দূরে হলেও ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক প্রেসনোটে বলা হয়েছে, ইউনেস্কো ন্যাশনাল হেরিটেজ সাইট থেকে রামপাল প্রকল্পের দূরত্ব ৭২ কিলোমিটার এবং তা নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে। বাস্তবে ইউনেস্কো ন্যাশনাল হ্যারিটেজ বলে আলাদা কিছুই নেই। যা রয়েছে তা হলো, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট। যা গোটা সুন্দরবনকেই বোঝায়। সুতরাং ১৪ কিলোমিটার দূরে হলেও ৭২ কিলোমিটার দূরে বলা জনগণের সঙ্গে জালিয়াতি।
রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে আগামী ২২ অক্টোবর। কিন্ত এ ধরনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের তারিখ ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। অবিলম্বে এ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন কর্মসূচি বাতিলের দাবি জানাচ্ছে জাতীয় কমিটিসহ সমগ্র জনগণ।
এসময় আরো বলা হয়, আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে সরকার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের কর্মসূচি প্রত্যাহার না করলে ১২ অক্টোবর জাতীয় কমিটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিবে।
ঘোষণাপত্র পাঠের শেষে আনু মুহাম্মদ এর পক্ষে পূর্ণ জনসমর্থন পেয়ে সেটিকে গণরায় বলে ঘোষণা দেন।
এসময় এই চুক্তির অসমতা তুলে ধরে অধ্যাপক আনু বলেন, ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানী (এনটিপিসি) প্রকল্প ব্যায়ের মাত্র ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে সুন্দরবন ধ্বংস করে ৫০ ভাগ লাভ কোন রয়েলটি ছাড়াই তার দেশে নিয়ে যাবে। জাতীয় স্বার্থে অসম এ চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
তা না হলে আমাদের রামসার সিটি সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। সুন্দরবনের মাত্র ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ও ল্যান্ডস্কিপ জোনে এ কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ জীব বৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।
পরবর্তী সময়ে গণরায়কে সমর্থন জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, সরকারকে বলতে চাই জনগণ কি বলে তা শুনুন। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ দরকার। আমরাও বলি বিদ্যুৎ দরকার। কিন্ত মানুষ না বাঁচলে এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে কে? ।
তিনি আরও বলেন, আপনারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্র ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন ঘোষণা বাতিল করেন। তা না হলে এই ভিত্তিপ্রস্তর আপনাদের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর হবে।
এর আগে বাগেরহাটে সমাবেশ শেষে লংমার্চটি ৪২ কিলোমিটার দূরের দিগরাজের উদ্দেশে রওনা দেয়।
পথে চুলকাঠিতে পথসভার পর লংমার্চটির প্রকল্প এলাকার সবচেয়ে কাছে গৌরম্ভায় পথসভা করার কথা থাকলেও তা হয়নি। কারণ ঢাকা থেকে ২৮টি গাড়ি নিয়ে শুরু হওয়া লংমার্চ বাগেরহাট ছাড়ে ১০৯টি গাড়ি নিয়ে। এই বিশাল বহর নিয়ে ভেতরের সরু রাস্তা পার হওয়া কঠিন হওয়ায় সেখানকার পথসভাটি বাতিল করা হয়।
লংমার্চকে কেন্দ্র করে বাগেরহাট থেকে মাংলা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত বিলবোর্ড লাগানো হয়, রাস্তার দেয়ালে লাগানো হয় পোস্টার।
এদিকে, বাগেরহাট থেকে মংলা দ্বিগরাজে যাওয়ার পথে সম্পূর্ণ রাস্তাজুড়ে দু’পাশে লাখো জনতা স্বাগত জানায় লংমার্চের বহরকে। সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে লংমার্চের গাড়িবহর রামপালের দ্বিগরাজ থেকে ঢাকার পথে রওয়ানা হয়েছে।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ :: এডিটর, বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এসআইএইচ-/বিআই