সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে সাপমারী-কৈগরদাসকাঠী এলাকায় কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান বন্ধের দাবিতে সোচ্চার সারাদেশ। আর সুন্দরবন রক্ষার এ আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দু এখন বাগেরহাট।
আন্দোলনের লক্ষ, উদ্দেশ এবং সুন্দরবনের উপর কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রভাব সম্পার্কে সকলকে জানাতে প্রতিদিন চলছে স্বচেতনতামূলক সভা, দেওয়াল লিখন, আলোচনা সভা, মানববন্ধন, পোষ্টারিং, লিফলেট বিতরন, বিলবোর্ড স্থাপনসহ নানা কার্যক্রম। আর এভাবেই আন্দলন ছড়িয়ে পড়পে শহর-গ্রাম সর্বত্র।
গতকাল (শনিবার) বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ বাগেরহাটের উদ্দগে হয়ে গেল এমন একটি মতবিনিময় সভা।
সকাল ১১টায় বাগেরহাট আস-বাংলাদেশ মিলনায়তনে অনু্ষ্ঠিত “সুন্দরবনের সন্নিকটে রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র: পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব এবং অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতি” বিষয়ক এ মতবিনিময় সভায় সভায় অংশ নেয় ছাত্র-শিক্ষকসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা।
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ-এর সংগঠক গৌতম দেবনাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক কমল কুমার ঘোষ, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটি বাগেরহাটের আহ্বায়ক রনজিত চক্রবর্তী, কমিটির সদস্য সচিব ফররুখ আহমেদ জুয়েল, এ্যাড.ডাকুয়া মনসুর আলী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ বাগেরহাট জেলা শাখার আহ্বায়ক দীপ্ত ঘোষের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য ও প্রতিক্রীয়া জানান ছাত্র ইউনিউয়ন বাগেরহাটের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম সজল, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফয়সাল আফ্রিদী(কুয়েট), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মনীষা চক্রবর্তী সহ বাগেরহাটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষর্থীরা।
এসময় বক্তারা বিভিন্ন তথ্য উৎপাত্তের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেন। তারা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ সরকার ও জনগনের জন্য এটি হবে আত্মঘাতী। অর্থনৈতিকভাবে চরম অসামন্জস্য পূর্ণ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ ভাবে দেশের স্বার্থ বিরধী।
তাই তারা সরকারের কাছে দেশের সম্পদ সুন্দরবনকে রক্ষা ও এ অঞ্চলের সার্বিক পরিবেশের রক্ষার স্বর্থে অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল এবং সকলকে আগামী ২৪-২৮ সেপ্টেম্বরের লংমার্চ সফল করতে আহব্বান জানান।
এছাড়া বক্তারা এসময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ।
এদিকে, ‘বিদ্যুৎ চাই তবে সুন্দরবন ধ্বংস করে নয়’ এই শ্লোগানে জাতীয় কমিটি আয়োজিত সুন্দরবন রক্ষার লংমার্চ সফল করতে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে বাগেরহাট ছাত্র ইউনিয়ন এবং পরিবেশ বীক্ষণ বাগেরহাট শাখা আজ সকাল থেকে সরকারি পি. সি. কলেজ, বাগেরহাটে ক্লাস ক্যাম্পেইন, মানববন্ধন ও পথসভা করেছে।
ছাত্র সংসদের জেলা যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম সজিবের সভাপতিত্বে এসময় বক্তারা সুন্দরবনের সন্নিকটে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ভয়াবহতা তুলে ধরে সবাইকে লংমার্চে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান ।
এছাড়া, সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনের অংশ হিসেবে পরিবেশ বীক্ষণ বাগেরহাট শাখা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়জন করেছে দিনব্যাপী প্রতিযোগিতার।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট পুরাতন কোর্ট চত্বরে আয়জিত প্রতিযোগিতার মধ্য থাকছে সাধারণ জ্ঞান, বিতর্ক, রচনা লিখন ও শিশু চিত্রাংক।
আযোজকরা জানান, শিক্ষার্থীরা মাঝে জাতীয় জীবনে সুন্দরবনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্বচেতনা বৃদ্ধি ও লংমার্চ সফল করতে প্রচারনার অংশ হিসাবে এ আযাজন।
এছাড়া লংমার্চ কর্মসূচি সফল করতে বাগেরহাট শহরসহ বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চলছে বিলবোর্ড স্থাপনের কাছ। চলছে পোষ্টার, লিফলেট, তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ছাপানো পুস্তিকা মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার কাজ।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বাগেরহাট জেলা শাখার সদস্য সচিব ফকরুল হাসান জুয়েল জানান, আগামী ২৪-২৮ সেপ্টেম্বরের লংমার্চ সফল করতে সব ধরণের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। জাতীয় কমিটিসহ এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর খুলনায় আসবেন।
পরদিন ২৮ মার্চ সকালে তারা বাগেরহাট শহরে পৌছাবেন। এসময় এখানে তারা একটি সমাবেশ করবেন। সেখান থেকে তারা দুপুরে মংলা উপজেলার দিগরাজ এলাকায় একটি সমাপনি সমাবেশ করবেন। তিনি জানান, সন্দরবন রক্ষার প্রচার-প্রচারনায় ছাত্র ও সাধারন মানুষের অংশ গ্রহণ সত্যি লক্ষনীয়।
আন্দোলনের আরেক নেতা রামপাল কৃষি জমি রক্ষা কমিটির সভাপতি সুশান্ত দাস জানান, লংমার্চ সফল করতে রামপাল উপজেলার সব মানুষের মধ্যে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। কর্মসূচিতে মংলা, রামপাল ও শরণখোলা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ যোগদিবেন বরে আশাবাদ জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জানান, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পুস্তিকাতে যে ভাবে লেখা হয়েছে তাতে এটি দেশের স্বার্থবিরোধী একটি চুক্তি। এই লেখা সঠিক হলে এ চুক্তি সরকারের বাতিল করা উচিত। তারা জানান, ভারতকে খুশি করতে যেয়ে কোন ভাবেই সুন্দরবন ধ্বংসের দায়দায়িত্ব সরকারের গ্রহন করা উৎচিত নয়।
আর আগামী নির্বাচনে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান চুক্তি প্রভাব পড়বে বলেও জানান তৃণমূল আ.লীগ এর এসব নেতা-কর্মী।
লংমার্চের যাত্রাসূচি –
২৪ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার: সকাল ৯টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে লংমার্চের যাত্রা শুরু হবে। এরপর শাহবাগ, সাভার রানা প্লাজা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ধামরাই হয়ে মানিকগঞ্জে জনসভার পর রাত্রিযাপন।
২৫ সেপ্টেম্বর, বুধবার: গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী হয়ে ফরিদপুরে জনসভা ও রাত্রিযাপন।
২৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার: মধুখালী, কামারখালী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কালিগঞ্জ। এরপর যশোরে জনসভা ও রাত্রিযাপন।
২৭ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার: ফুলতলা, দৌলতপুর, খালিশপুর হয়ে খুলনায় জনসভা শেষে রাত্রিযাপন।
২৮ সেপ্টেম্বর, শনিবার: বাগেরহাট, রামপাল (গৌরম্ভা বাজার, চুলকাঠি)। এদিন বিকেলে রামপালের দ্বিগরাজে সমাপণী জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
যাত্রাপথে লংমার্চ রুটের জেলাগুলোতে জনসভা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পথসভা, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ :: নিউজ ডেস্ক,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এসআইএইচ-নিউজ এডিটর/বিআই