FOLLOW-UP বাগেরহাটের মোল্লাহাটে খাদ্য গুদামে হরিলুট; দু’দিনে সাড়ে ৫শ বস্তা খাদ্য-শষ্যে উদ্ধার
ইনফো ডেস্ক
11 September 2013
খবর, বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট
181 পঠিত
বাগেরহাটে এলএসডি খাদ্য গুদামে সংরক্ষিত ধান-চাল-গম খোদ খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে হরিলুট করা হয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরে এ ধরনের ঘটলেও ঘটনার সাথে জড়িত অসাধু কর্মকর্তারা রয়েছে ধরার ছোঁয়ার বাইরে। অথচ ধান-গম ও চাল সংগ্রহের নামে চাষীদের নিকট থেকে ধান-গম ক্রয়ের টাকা না দিয়ে মাঠ পর্যায়ের চাষীদের হয়রানি করা হচ্ছে দিনের পর দিন।
এদিকে বুধবার ওই খাদ্য গুদামের ১৯ টি খামালের (সারি) মধ্যে মাত্র ২ টি খামাল গুনে ১৭শ বস্তা খাদ্যের কোন হদিস মেলেনি।
উর্ধ্বতন খাদ্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত ওসি ফুড মিলন কুমার মন্ডল পালিয়ে গেলেও গত দু’দিনে তাকে আটক করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেছে খাদ্যশষ্য পাচারের ঘটনায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রধান করে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
পাচার হওয়া এই খাদ্য শষ্যের মধ্যে গত দু’দিনে উপজেলা সদর থেকে সাড়ে ৫শ বস্তা উদ্ধার হলেও কাউকে আটক করা হয়নি।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো: এমদাদুর রহমান বাগেরহাট ইনফোকে জানান, মোল্লাহাট খাদ্য গুদামে সর্বমোট ১৮৪৫.৬৪১ মেট্রিক টন খাদ্য শষ্য মজুদ ছিল। এরমধ্যে ৯৫৪.৭২ মেট্রিক টন চাল, ৬২৬.৯২১ মেট্রিক টন গম ও ২৬৪ মেট্রিক টন ধান মজুদ ছিল।
সম্প্রতি ওই খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা মিলন কুমার মন্ডলকে বাগেরহাট সদরে বদলী করা হয়। তার স্থলে বদলী হয়ে আসেন এসএম জলিলুর রহমান।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) জলিলুর রহমান তাকে খাদ্য গুদামের মালামালসহ দায়িত্ব বুঝে দিতে বললে মিলন কুমার ৩ দিনের সময় চান। জলিলুর রহমান বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানালে তাদের সন্দেহ হয়।
তারা ঘটনাস্থলে পৌছে বস্তা গননা শুরু করলে খাদ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে থেকে অভিযুক্ত মিলন কুমার মন্ডল পালিয়ে যায়।
এই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় খোদ খাদ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত বলে অনেকের সন্দেহ।
অভিযোগ রয়েছে জেলা ও বিভাগীয় উর্ধ্বতন খাদ্য কর্মকর্তাদের নিয়মিত খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তারা মাসোহারা নিয়ে অভিযুক্ত ওসি ফুড মিলন কুমার মন্ডলকে এই বিপুল পরিমান খাদ্যশষ্য পাচারে সহায়তা করেছে।
এব্যাপারে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো: এমদাদুর রহমানের কাছে তিনিসহ তার অধিনস্তদের সহায়তায় গুদামের খাদ্য-শস্য পাচারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ন অস্বিকার করেছেন।
বাগেরহাটের মোল্লাহাট এলএসডি খাদ্য গুদামের মাত্র দুটি খামাল (সারি) গননা শেষ হয়েছে। এতে ১৭শ বস্তা কম হয়েছে বলে বুধবার বিকালে খামাল গননা শেষে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব আলম।
তিনি জানান, ওই গুদামে মোট ১৯ টি খামালে(সারি) খাদ্য শষ্য রয়েছে। এভাবে খামাল গননা করলে প্রকৃত খাদ্যশষ্য লুটের হিসাব পেতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
এই গননা শেষে লুটের সঠিক পরিমান জানার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এসময় জানান তিনি।
তবে মোল্লাহাট বাজারের সরকারী খাদ্য ক্রয় সিন্ডিকেটের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া সাড়ে ৫শ বস্তা খাদ্য শষ্য উদ্ধার হলেও সরকারের সিদ্ধান্ত হীনতায় এখনও পর্যন্ত মামলা বা কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে মোল্লাহাট বাজার কমিটির নেতারা দাবি করেছেন বাজার থেকে উদ্ধার হওয়া খাদ্যশষ্য বৈধ। এগুল তারা বিভিন্ন সময়ে সরকারী কর্মকর্তা ও বরাদ্দ দেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছথেকে কিনে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্য গুদামের এক কর্মকর্তা বাগেরহাট ইনফোকে জানান, বিভিন্ন সময়ে ওই গুদাম থেকে ওসি এলএসডি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আড়াইশ মেট্রিক টনের অধিক চাল ও গম কালোবাজারে বিক্রি করে সেই টাকা আত্মসাত করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. ন. ম. খায়রুল আনাম বাগেরহাট ইনফোকে জানান, গোপালগঞ্জের সাতপাড় এলাকার বাসিন্দা ওসি ফুড মিলন কুমার মন্ডল কি ভাবে খাদ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পালিয়ে গেল তা তার বোধগম্য নয়।
তাকে আটকে পুলিশের কয়েকটি টীম মাঠে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সরকারী খাদ্য গুদাম থেকে এই বিপুল পরিমানের খাদ্য-শস্য পাচারের ঘটনায় ব্যপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়াতে জেলার অন্যান্য খাদ্য গুদাম গুলোতেও দ্রত খাদ্য-শস্য গননার দাগিত দিয়েছেন স্থানীয় স্বচেতন মহল।
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ :: আহসানুল করিম ও ইনজামামুল হক,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।