বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের কাঠ চোরাকারবারীরা, বনের বিভিন্ন রুট থেকে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট সুন্দরী কাঠ।
প্রতিবছর ঈদ মৌসুমকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটের শরণখোলার বনসংলগ্ন বগী, গাবতলা, সোনাতলা, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জ্ঞানপাড়া, চরদুয়ানী, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি, পাড়েরহাট ও মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা এলাকার চিহ্নিত কাঠ চোরাকারবারী চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এসব চক্র বনের বগী, কটকা ও সুপতি স্টেশন এলাকা থেকে সুন্দরী কাঠ কেটে গভীর রাতে ট্রলার বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে থাকে। আর এ কাঠ পাচারের নিরাপদ রুট হচ্ছে, বলেশ্বর, বিশখালী ও পায়রা নদী।
রোববার (২৮ জুলাই) রাতে পূর্ব সুন্দরবন বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের সামনের নদী দিয়ে পাচারকালে নামহীন একটি ট্রলার থেকে প্রায় এক হাজার ঘনফুট সুন্দরী কাঠের এমন একটি চালান আটক হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।
পূর্ব সুন্দরবন বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, রোববার দিনগত রাত ১টার দিকে শরণখোলা স্টেশনের সামনের নদীতে ট্রলারের শব্দ শুনে বনরক্ষীরা এগিয়ে এসে ট্রলারটিকে ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাচারকারীরা ট্রলার থেকে লাফিয়ে নদীতে পড়ে পালিয়ে যায়। পরে বনরক্ষীরা সুন্দরীকাঠ বোঝাই নামহীন ট্রলারটি জব্দ করে রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ওই ট্রলার থেকে ১৪০ পিট কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছে। এখনো ট্রলারে যে কাঠ রয়েছে তা মিলিয়ে প্রায় এক হাজার ঘনফুট হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। জব্দকৃত ট্রলাটি পাথরঘাটা উপজেলার জ্ঞানপাড়া এলাকার হতে পারে বলে বনবিভাগ জানিয়েছে।
অভিযোগ আছে, বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট স্টেশনগুলোর একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মোটা টাকার বিনিময়ে কাঠ পাচারে সহযোগীতা করছেন। মাঝেমধ্যে দোষ এড়াতে দু-একটি চালান ধরা হচ্ছে। কিন্তু পাচার হয়ে যাচ্ছে বিশাল বিশাল কাঠের চালান।
স্থানীয়রা জানান, কঠোর নজরদারী না থাকা এবং বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারনে দিনে দিনে উজাড় হতে চলেছে সুন্দরবন। তারা জানান, শরণখোলা থেকে গত ১৯ জুলাই কোস্টগার্ড স্টেশন প্রত্যাহার করার পর থেকে সুন্দরী কাঠ পাচার আগেরচেয়ে বেড়ে গেছে।
এব্যাপারে শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র কাঠ পাচারে বনবিভাগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আমাদের প্রতিবেদকে বলেন, কাঠ পাচার কমবেশি সবসময়ই হয়। তবে বর্তমানে পাচারকারীদের দৌরাত্ম একটু বৃদ্ধি পেলেও বনবিভাগের কঠোর নজরদারী রয়েছে।
উল্লেখ, এর আগে গত ১৪ জুলাই ভোরে একই রেঞ্জের ভোলা নদী থেকে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৫০০ ঘনফুট সুন্দরী কাঠ জব্দ করা হয়েছিল।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।