তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালকে আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিনকে সদস্যসচিব করে সুন্দরবনকে রক্ষায় ১০১ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সুন্দরবনের পাশে রামপালে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকারক অন্যান্য কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আন্দোলন করবে এ কমিটি। প্রাথমিকভাবে তাঁরা এ আন্দোলন বিষয়ে একটি অবস্থানপত্র ও কর্মকৌশল তৈরি করবেন। শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবনের সব স্থাপনা, প্রকল্প, দখলদারদের অবিলম্বে উৎখাত কর; পানি, মাটি, বন, দূষণ এবং নির্বিচারে গাছ কাটা ও জীবন হত্যা বন্ধ কর! রক্ষা কর রাষ্ট্রীয় গর্ব সুন্দরবন’—এ দাবিতে সমাবেশ হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা, সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস মুভমেন্ট, সেভ দ্য সুন্দরবন, গ্রিন ভয়েস, বাগেরহাট ডেভেলপমেন্ট কমিশন, রামপাল কৃষিজমি রক্ষা কমিটি, নেচার ক্যাম্পেইন বাংলাদেশ ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন সুলতানা কামাল।
তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। একে ধ্বংস করা মানে আমাদের অধিকার হরণ করা, যা পুরোপুরি সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন। শুধু রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ নয়, আমরা চাই সুন্দরবন ধ্বংসকারী সব কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।’ এসময় সুন্দরবন রক্ষায় জনগণকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তার বক্তবে বলেন, ভারতের পরিবেশ আইনে বলা আছে, বনের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সে দেশের একজন হাইকমিশনার একে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে তাঁর দেশের আইনের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন।
তার বক্তবের সাথে সুর মিলিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে, সুন্দরবন রক্ষায় সরকার তার যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বার্থের দ্বন্দ্ব কাজ করে। একটি বিশেষ মহলের স্বার্থ রক্ষার জন্য সুন্দরবন ধ্বংসের এ কাজ চলছে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দাবী জানান সুন্দরবন বিষয়ে একটি আলাদা আইন প্রণয়নের। তিনি বলেন, সুন্দরবন রক্ষায় আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর জন্য দেশের বাইরের সুশীল সমাজ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা উচিত। প্রয়োজনে জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করে ঢাকা থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত লংমার্চ করতে হবে।
বাপার সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন বলেন, সুন্দরবন ধ্বংসের চক্রান্ত দীর্ঘদিন আগে শুরু হলেও রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে ব্যাপকভাবে তা প্রকাশ পেয়েছে। সুন্দরবন রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক আন্দোলন গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন রুহীন হোসেন, বাপার যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন ও স্থপতি ইকবাল হাবিব, সেভ দ্য সুন্দরবনের সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম, সিএইচআরএমের মহাসচিব মো. মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদ, আইনজীবী জাকির হোসেন।