খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের শোচনীয় পরাজয়ের পর জাতীয় সংসদের মংলা-রামপাল (বাগেরহাট-৩) আসনের জাতীয় নির্বাচনের সমিকরন নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
এ পরাজয়কে ঘিরে শুরু হয়ে গেছে আগামি সংসদ নির্বাচনে আগাম ভোটের হিসেব নিকেশ। তালুকদার খালেক কি এবার মংলা-রামপাল সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন নাকি বর্তমান সাংসদ হাবিবুন নাহার ই এ আসনে দলীয় প্রার্থী বহাল থাকবেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগসহ ১৮ দলীয় জোটেও চলছে নানা আলোচনা।
অনেকেই মনে করছেন, এবার এ আসনে ১৪ দলে নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটতে পারে। মংলা-রামপালের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এসব জানা গেছে তথ্য।
নির্বাচনে তালুকদার খালেক পৌর কাউন্সিলর থেকে এমপি, মেয়র- যেখানে ভোটে দাড়িয়ে ছিলেন সেখানেই ছিল তার সাফল্যের জয় ধ্বনি। দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন মন্ত্রিত্বের। এত আকাশ ছোঁয়া সফলতার ধারাবাহিকতায় হঠাৎ করে যবনিকা পতনে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন তার সমর্থক কর্মী ও নেতারা। দলের স্থানীয় নেতা কর্মীদের মাঝে শুরু হয়েছে তোলপাড়। দলীয় নেতা কর্মিদের অনেকেই হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, মংলা-রামপাল আসনে তিনি বা তার স্ত্রী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে এবং এখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচন করলে হয়তো তারা দু’জনেই হালে পানি পেতে নাও পারেন।
তবে খালেকের সমর্থকরা মনে করছেন, খুলনায় হেরে গেলেও সংসদ নির্বাচনে মংলা-রামপালে এর কোন প্রভাব পড়বে না। এবারের সংসদ নির্বাচনে তিনি বা তার স্ত্রী যেই দলীয় মনোনয়র পাক না কেন সে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে।
মংলা-রামপাল (বাগেরহাট-৩) সংসদীয় এ আসনটি বিগত ১৯৯১ থেকে শুরু করে বরাবরই দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। অবশ্য পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে এখানে কয়েকদিনের জন্য এমপি হয়েছিলেন বিএনপি’র প্রার্থী এইউ আহম্মেদ। আওয়ামী লীগের টিকেটে একক প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে লড়ে তিন বারজয়ী হয়েছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আঃ খালেক।
পরবর্তীতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার সাবেক এ নির্বাচনী আসনটিতে দলের প্রার্থী সংকট দেখা দেয়। আর এ অবস্থায় তখন প্রচারনায় নামেন দলের একাধিক প্রাথী। শেষ পর্যন্ত সবাইকে টপকে খালেক পত্নী হাবিবুন নাহার এ আসনটিতে দলের টিকিট পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন এবং তিনি মহাজোটের প্রাথী হিসেবে জয়ী হন। ফলে স্ত্রী হাবিবুন নাহার এ আসনটির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এখানে বহাল থাকে খালেকের কর্তৃত্ব।
কিন্তু এবারের সিটি নির্বাচনে তার পরাজয়ের কারণে খালেক ও তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার দু’জনই এ এলাকায় দারুণ ইমেজ সংকটে পড়েছেন বলে অনেকেই মনে করছেন।
সংসদীয় এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী খালেক বিরোধী নেতারা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেজায় খুশী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখের আগমন ঘটতে পারে।
গত সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বর্তমান মংলা উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী, রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ রউফ, শরিফুল হাসান বিথী, বিদ্যুৎ মহলদার, মেজর (অব.) জিল্লুর রহমানসহ অনেক নেতা নেত্রীই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
এবার এসব নেতা নেত্রী ছাড়াও কেন্দ্রিয় অনেক নেতাসহ স্থানীয়বাবে নতুন মুখের নাম মনোনয়ন প্রার্থীর তালিকায় আসতে পারে। এদের পক্ষ থেকেই এখনই কেন্দ্রে লবিং গ্র“পিং শুরু হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
এদিকে তালুকদার খালেকের খুলনা সিটিতে পরাজয়ের পর এ আসনে ১৮ দলের পক্ষেও আগামি নির্বাচনে নতুন হিসাব নিকাশ শুরু হয়েছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এ আসনের বিএনপি’র প্রার্থী না থাকলেও এবার দলীয় নেতা কর্মীরা এখানে বিএনপি’র প্রার্থী দাবি করছেন। এদের বক্তব্য হচ্ছে, এখানে জামায়াতের চেয়ে বর্তমানে বিএনপি’র সমর্থন বেশী রয়েছে। এ কারণে জোটের পক্ষ থেকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী দিলে এবারের নির্বাচনে সহজেই দলীয় ঘরে জয় আনা সম্ভব হবে।
১৬-০৬-২০১৩ :: এম এম ফিরোজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।