খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পরাজয় ইস্যু হতে পারে সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাটের রামপালের নির্মানাধীন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটের রামপালের সন্তান তালুকদার আব্দুল খালেককে কেন্দ্র করে রামপাল-মোংলাসহ বাগেরহাট জেলার সচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় চলছে। খুলনা সিটি নির্বাচনে এবার সদ্য সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বাগেরহাটের ইমেজকে ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন।
নানা কারনে ‘নন খুলনা’র ভোটার বিশেষ করে বাগেরহাটের ভোটারদের কাছে টানতে পারছেন না তালুকদার আব্দুল খালেক এমনই কথা চালু হয়েছে ভোটারদের মাঝে।
গত ৩ নির্বাচনে বাগেরহাটের ইজমকে কাজে লাগিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন তৈয়বুর রহমান ও তালুকদার আব্দুল খালেক। কিন্তু এবারের নির্বাচনে রামপালের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান, চরম চিংড়ি ঘের বিরোধী হিসেবে পরিচিত থাকলেও আয়ের বড় অংশ চিংড়ি ঘের থেকে আসা ইত্যাদি প্রশ্ন এখন তালুকদার আব্দুল খালেকের ক্লিন ইমেজকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে।
এছাড়া খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোটার নয় বাগেরহাটের এমন বাসিন্দাদের নিয়ে ব্যাপক গনসংযোগকেও অনেকে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। আর এসব বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত দলীয় নেতাকর্মিদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে বাগেরহাট ইনফোকে জানান নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা।
তারা জানান, ১৯৯১ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে রামপাল-মংলার রাজনীতির মাঠ এককভাবে দখলে রেখে তিনি ব্যপক আলোচিত হন তালুকদার আব্দুল খালেক। এরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত ও একবার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল খালেক। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি একক নিয়ন্ত্রনে রেখে এ এলাকা পরিচালনা করেন। দলের ভিতরে নেতৃত্ব গড়ে উঠুক এটা তিনি চাননি। দলীয় কোন ব্যক্তি বা কেউ কখনো মুখ্য পদের জন্য লড়াই করে লাইম লাইটে উঠে এলেই তাকে দমিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে পদবঞ্চিত হয়েছেন মংলার ইজারদার ইদ্রিস হোসেন, ইজারদার বুলবুল হোসেন, হাওলাদার আবু তাহের, রামপালের আবু সাইদ, মেহেদী হাসান মিন্টু, হোসনে আরা মিলি প্রমুখ।
পুলিশ প্রোটোকল নিয়ে করপোরেশনের গাড়িতে রামপাল-মংলায় ভ্রমন, রামপাল-মংলার লোকদের চাকুরি দেওয়া, গালী-গালাচ করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোদ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। সিটি করপোরেশনে যাওয়ার চার বছরের মধ্যে নির্লোভ ওই মানুষটির কোটিপতি বনে যাওয়ার বিষয়টি এখন সর্বত্রই আলোচনার ঝড় তুলছে।
রামপালে এমপি এবং মন্ত্রী থাকা কালে যে মানুষটি চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ীদের বিরোধিতা করেছিলেন সেই মানুষটি মৎস্য ঘের করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। যেটা তিনি তার নির্বাচনী হলপনামায় উল্লেখ করেছেন। এমন নানা বিষয়ে নিজ দলের অনেকর ভেতরই চলছে আলোচলা।
রামপাল-মংলার বিভিন্ন ঘের ব্যবসায়ীর সংগে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় তিনি কোন মৎস্য ঘের করেন কিনা সেটা কারও জানা নেই। এ ছাড়াও একটি বড় বিষয় এখানে তার নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে, তা হল ‘সুন্দরবনের পাশে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র’
দেশী বিদেশী পরিবেশবাদী সংগঠন ও খুলনা-বাগেরহাটের সচেতন মহল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধীতা করে আসলেও তালুকদার আব্দুল খালেক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে সুন্দরবনের পাশে রাজনৈতিক বিবেচনায় উন্নয়নের ধূয়ো তুলে বিদেশীদের হাতে এ এলাকার মাটি ইজারা প্রদান করলেন। গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ন প্রতিবাদ সমবেশ তিনি কঠোর হাতে দমন করেন।
ভোট ব্যাংক বলে খ্যাত হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটেই মূলত এই এলাকায় তিনি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। হিন্দু অধ্যুসিত এলাকাগুলোর মৎস্য ঘেরগুলি প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা কৌশলে সামান্য কিছু বা নাম মাত্র হারির টাকা দিয়ে মৎস্য ঘেরগুলি দখলে নেয়। এ নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে বিচার তো পান-ই না, বরং উল্টো হয়রানীর শিকার হন। এ সকল বিষয় নিয়ে মানুষের ভিতর ক্ষোভ দানা বেঁধে আছে।
আর এসব কারণে খুলনা সিটি নির্বাচনে ‘বাগেরহাটের ইমেজ’ তালুকদার আব্দুল খালেক এর বিপক্ষে যেতে পারে বলে ধারনা অনেকের। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকা নির্বাচনে তার জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে আওয়ামী লীগ সকারের শাসন আমল ও রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে তার অবস্থান বড় ফ্যাক্টর হবে বলে মনে করেন।
আর এমন নানা কারনে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানী সরকারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে বেশ বেশ উৎসুক বাগেরহাটবাসিও।
১৩-০৬-২০১৩ :: নিউজ করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।