বাগেরহাটের শরনখোলা-মোড়েলগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। খোদ সরকারী দুই দপ্তরের দ্বন্দের জের হিসাবে মঙ্গলবার ওই সড়কের কাজ বন্ধ ঘোষনা করা হয়।
এ ঘটনায় উভয় দপ্তরের কর্মকর্তাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে দীর্ঘদিন পর এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে আবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত বাগেরহাটের শরনখোলা-মোড়েলগঞ্জ এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ গত এক মাস আগে শুরু হয়। ওই সড়কের দু’পাশে সামাজিক বনবিভাগের রোপনকৃত বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিলামের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিলাম না হওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করে।
এক পর্যায়ে গাছ বিনষ্টের অভিযোগ এনে গত ২ জুন সামাজিক বনবিভাগের কর্মকর্তা সুলতা উল আলম বাদী হয়ে মোড়েলগঞ্জ থানায় ছয় জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যসহকারী শেখ এনায়েত হোসেন ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তানজির কনস্ট্রাকশনের সত্বাধিকারী খোরশেদুল আলমসহ পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে সামাজিক বন সার্কেলের (যশোর) বন সংরক্ষক ফারুক হোসেন ও বাগেরহাট সামাজিক বনবিভাগীয় কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আঞ্চলিক মহাসড়কের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ধোনা নামক স্থানে কাজ চলাকালীন অবস্থায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যসহকারী শেখ এনায়েত হোসেন ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এসকেবেটর চালক রাশেদুল ইসলামকে ধরে জোরপূর্বক গাড়ীতে উঠায়। পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন তাদের চালককে ছাড়িয়ে রাখে।
তবে সড়ক বিভাগের কার্যসহকারী এনায়েত হোসেনকে জোর করে গাড়ীতে তুলে আনার খবরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মচারীরা বাগেরহাট টোলপ্লাজা এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে ওই বন কর্মকর্তাদেরসহ এনায়েত হোসেনকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসে নিয়ে আসে। পরে উভয় অফিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে ওই সড়কের সৃষ্ট সমস্যা সমাধান করার জন্য আজ বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বাগেরহাট সামাজিক বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফোকে জানান, ওই সড়কে ১৯৯৪ সাল ও ১৯৯৬-৯৭ সালে সড়ক বিভাগের সাথে চুক্তি বিনিময়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করা হয়। এরপর ওই সড়কের নির্মাণ কাজের বিষয় নিয়ে গত বছরের আগষ্ট মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাক্তার মোজাম্মেল হোসেন গাছ অপসারনের জন্য অবহিত করেন। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে এ বিষয়ে পত্র প্রেরণ করলে তারা টেন্ডার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত গাছ অপসারন না করার জন্য অনুরোধ করেন।
এক পর্যায়ে তাদেরকে না জানিয়ে গত ২৩ মে ওই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হলে সামাজিক বনবিভাগের রোপনকৃত গাছগুলি বুল্ডোজার দিয়ে নষ্ট করে ফেলে। পরে উভয় পক্ষের পত্র প্রেরণের প্রেক্ষিতে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে গাছ অপসারণ বিষয়ে সড়ক বিভাগকে অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ জানান। তারা কোন অনুরোধ না মেনেই ইচ্ছেমতো বনবিভাগের গাছগুলোকে নষ্ট করে ফেলায় উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।
তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার মঙ্গলবার সকালে সামাজিক বন সার্কেলের বন সংরক্ষক ফারুক হোসেন সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তার নির্দেশে সড়ক বিভাগের কার্যসহকারী এনায়েত হোসেনকে গাড়ীতে তুলে বাগেরহাটে আসার পথে সড়ক বিভাগের লোকজন টোলপ্লাজা এলাকায় তাদের উপর চড়াও হয় এবং তাদেরকে জোর করে সড়ক বিভাগের কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
এব্যাপারে বাগেরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকেীশলী শেখ আব্দুল আলী বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, কোন চুক্তিপত্র ছাড়াই তাদের অনুরোধে গাছগুলো অপসারণ করে রাস্তার পাশে রাখা হয়েছিল। সামাজিক বনবিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা চালায়।
এ ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক বলে দাবী করেন তিনি জানান, বর্তমানে ওই সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে পুনরায় কাজ চালু করা কবরা যাবে বলে এসময় তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
১২-০৬-২০১৩ :: উপজেলা নিউজ করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।