ঐতিয্যবাহী ও সু-প্রাচীন ফকিরহাটের নলধা বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেহালদশা, বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে।
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলাধীন নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিয্যবাহী ও সু-প্রাচীন এবং বৃটিশ আমলের অত্র এলাকায় একমাত্র বিদ্যাপিঠ নলধা বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলি সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও উদাসীনতার কারনে দীর্ঘদিন যাবৎ জরার্জিন অবস্থায়।
১১৮ বছর বয়সের এই বিদ্যালয়টি বৃটিশ শাসনামলে তদানিন্তন খুলনা জেলা বোর্ডে ১ম বাঙ্গালি চেয়ারম্যান বাবু রায় বাহাদুর অমৃতলাল রাহা কর্তৃক ১৮৯৫ সালে স্থাপতি হয়। কলিকতা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক স্থায়ীভাবে স্বীকৃত লাভ করে।
এই বিদ্যালয় হতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পিতা শেখ লুৎফর রহমান সাহেব সহ মূলঘর সরকারি মাধমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আশরাফ আলী, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ বলায় চন্দ্র রায়, ডাঃ অশ্মিনী কুমার রায় (এফআরসিএস), কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাতা শচিন্দ্রনাথ বসু, প্রাক্তন গণপরিষদ সদস্য ও প্রবীন আ’লীগ নেতা শেখ আলি আহম্মদ, এ্যাডভোকেট মোল্যা হারুন অর রশিদ সহ অনেক সনামধন্য ব্যাক্তিবর্গ অত্র বিদ্যালয় হতে বিদ্যার্জন করেছেন।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবনের দেয়াল ও ছাদ থেকে প্লাষ্টার খসে পড়ছে। সামন্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে শ্রেণী কক্ষগুলি স্যাত-স্যাতে অবস্থা বিরাজ করে। বিদ্যালয়ের মূল ভবনের ৫টি কক্ষ আজও দরজা-জানালার মুখ দেখেনি। দ্বি-তল ভবনের কক্ষগুলো ছাদ যে কোন সময় ধ্বংসে পড়তে পারে। বিদ্যালয়টির পূর্ব পার্শ্বে বিজ্ঞান ভবনটি ১৯৬১/৬২ সালে স্থাপিত হয়।
প্রায়ই ১৫ বছর যাবৎ উক্ত ভবনে ছাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেখানে বিজ্ঞানাগার পরিচালনায় ও পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
ভবনের কক্ষগুলি অত্যান্ত ঝুকিপূর্ন হওয়ায় শ্রেণী কক্ষে অভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের সামনে খোলা আকাশের নিচে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে-বিদ্যালয় ভবনের লোহার কড়ে খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
৬টি কক্ষ কিছুটা ভাল থাকলেও এর মধ্যে ২টি রয়েছে অফিস রুম ও ৪টি ক্লাশ রুম। অথচ ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণী বিভাগে কক্ষ প্রয়োজন প্রায় ৮/১০টি। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মহসীন বলেন-বিদ্যালয়টি পূনঃনির্মাণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিকট লিখিত দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। অবিলম্বে ভবনগুলির পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে ও পূনঃনির্মাণের উদ্যোগ না নিলে ভবনটি ভেঙ্গে পড়ে যে কোন মুহুর্তে বড়ধরনের ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রহলাদ চন্দ্র হীরা জানান, অনেক সনামধন্য ব্যাক্তি অত্র বিদ্যালয় হতে বিদ্যার্জন করে প্রতিথযষা ব্যাক্তি হিসাবে গণ হয়েছেন। বিদ্যালয়টি আজও গর্বের সাথে তার ঐতিয্য ধরে রখেছে। কিন্তু বিদ্যালয়টি বেহালদশায় পরিণত হলেও দেখার যেন কেউ নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যালয়ের ভবনগুলি ঝুকিপূর্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, যে কারণে বর্তমানে বিদ্যালয় চত্বর খোলা আকাশের নিচে’ই কয়েকটি ক্লাশ করা হচ্ছে।
এসএমসির সদস্য মো. ওহাব সেখ জানান, অভিভাবকগণ ভবনের বেহাল দশার কারণে তাদের ছেলে-মেয়েরদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে শংকাবোধ করছেন। তাই ভবনের এ অবস্থা বিরাজ করলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর হার হ্রাস পেতে পারে।
এ ব্যাপারে ফকিরহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান বলেন-স্কুল কর্তৃপক্ষের দরখাস্ত আমরা পেয়েছি। উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট বিদ্যালয়ের ভগ্নদশা সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
তিনি শিগ্রই ভবনের সংস্কার অথবা পূনঃনির্মাণের ব্যবস্থা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
৩০-০৫-২০১৩ :: বিশেষ প্রতিবেদন, মান্না দে,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।