দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে মংলা বন্দরের অদূরে খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়া আবার শুরু হচ্ছে।
ইতিমধ্যে বিমান ওঠানামার ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদনের জন্য খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য কুয়েটকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সরকারের শীর্ষ মহলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যে ছোট যাত্রীবাহী বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা যায়।
দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দ্বিতীয় বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর মংলাকে কার্যকর ও সুন্দরবনের পর্যটন সুবিধার লক্ষ্যে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।
১৯৯৫ সালের মার্চে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রস্তাবিত খানজাহান আলী বিমানবন্দরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
বিএনপি জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালে ২৬ জানুয়ারি পৃথক পিপি প্রণয়ন করে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় বৈদেশিক অর্থায়নের ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৬ সালে প্রকল্প সংশোধন নয়, নতুন প্রকল্প হিসেবে প্রস্তাব প্রেরণের জন্য পরিকল্পনা কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাইয়ের নামে কেটে যায় ৫ বছর।
কুয়েট সূত্র জানায়, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এডিপি সভা অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদনের জন্য নিয়োগ দিতে এই সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর পর ৩ মাস অতিবাহিত হলেও বিষয়টির কোন গতি পায়নি।
পরবর্তিতে গত ৪ মার্চ কুয়েটকে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য কেন নিয়োগ দেয়া হয়নি তা জানতে চেয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে মন্ত্রণালয় চিঠি দেয়।
সর্বশেষ একটি সুত্র থেকে জানা যায়, কুয়েটকে এই স্টাডি সম্পন্নের জন্য ইতিমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, প্রস্তাবিত বিমান বন্দরটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মংলার অতি কাছে। বিমান বন্দরটি স্থাপিত হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে। দেশী ও বিদেশী ব্যবসায়ী মহল তুলনামূলক কম সময়ে ও নিরাপদে ইপিজেড ও মংলা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনসহ ইপিজেড ও বন্দরের কার্যকারিতা বাড়বে। অন্যদিকে বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের পর্যটন বিকাশে এই বিমান বন্দর বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এদেশের পর্যটন সেক্টরে সুন্দরবনের অপরূপ বৈচিত্র্য, হযরত খানজাহান আলী (রহ:) মাজার, ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ সহ এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও দর্শনিয় স্থানাপনায় গুরুত্ব অপরিসীম। এসব স্থানসমূহে দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করতে সক্ষম। বিমান বন্দরটি নির্মাণ হলে পর্যটকদের নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা হবে এবং পর্যটনখাতের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি পণ্য চিংড়ির প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ সরাসরি খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে রফতানি হয়ে থাকে। বিমান বন্দর নির্মাণ হলে দেশের চিংড়ি রফতানি সহজতর হবে ও অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
উল্লেখ, গত ১৫ ডিসেম্বর খুলনায় এক অনুষ্ঠানে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী লেঃ কর্নেল (অবঃ) ফারুক খান মংলার অদূরে ফয়লায় নির্মাণ প্রক্রিয়া থমকে থাকা খানজাহান আলী বিমান বন্দরের কাজ শুরু করার দাবির প্রেক্ষিতে বিমান মন্ত্রী এখানে ছোট আকারের যাত্রী পরিবহন বিমান ওঠানামা করানো যায় কিনা সে বিষয়ে জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন।
২৭-০৫-২০১৩ :: নিউজ করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।