অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতিহিংসা আর জনপ্রিয়তার কারণে বাগেরহাটে রাজনৈতিক হত্যার সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। প্রতিবছর এই হত্যার মিছিলে যোগ হচ্ছেন জনপ্রিয় নেতারা।
বাগেরহাটে রাজনীতির বিভিন্ন অঙ্গনে যারা জনপ্রিয় হয়েছেন তারাই নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে একাধিক ব্যক্তি জানান।
গত এক যুগে বাগেরহাটে এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ১৬ জন রাজনৈতিক নেতা। রাজনৈতিক লাইম লাইটে আসার আগে এই নেতাদের নামে একাধিক অভিযোগ থাকলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর তারা সবাই জনপ্রিয়তা অর্জনে মরিয়া হয়ে পড়েন। আর এই জনপ্রিয়তা অর্জনই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে হত্যাকাণ্ডের পর তাদের স্বজনরা জানান।
দীর্ঘ এক দশকে যেসব নেতাকর্মী জনপ্রিয়তার কারণে হত্যার টার্গেটে পরিণত হন তারা হলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কালীদাস বড়াল।
তিনি যেমন চিতলমারীর জনপ্রিয় নেতা ছিলেন তেমনি বাগেরহাট বারেও সুনামের সঙ্গে আইন পেশা পরিচালনা করতেন। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০০ সালে মর্নিং ওয়ার্কের সময়ে তিনি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
সে সময়ে বাগেরহাটের হিন্দু কমিউনিটিসহ সব পেশাজীবীর লোকজন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
এরপর একে একে সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এমএ আওয়াল, রামপাল-মংলার চারদলীয় জোটের সংসদ সদস্য প্রার্থী জামায়াত নেতা গাজী আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক মংলা পৌর চেয়ারম্যান আবদুল বাতেন, সদরের কাড়াপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান ও পৌর যুবদল সভাপতি শেখ লিটন, ডেমার ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন তরফদার, রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবদুর রশিদ খান, বাইনতলা ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান, বুড়িরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় পিন্টু, গৌরম্ভা ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি আসলাদ হোসেন, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, মংলা পৌর কমিশনার বিএনপি নেতা আবদুল হালিম, পৌর কমিশনার ও যুবদল নেতা আসাদুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা মানসা-বাহিরদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আতর আলী, শ্রমিক লীগ নেতা খান সাদেকুল ইসলাম এবং সর্বশেষ হত্যার শিকার হন ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা খান জাহিদ হাসান।
এসব নেতাকর্মীর মধ্যে শেখ লিটনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মত থাকলেও জনপ্রিয়তা ছিল অনেক বেশি। সে সময়ে লিটন হত্যাকাণ্ডের পর বাগেরহাটের কাড়াপাড়া ইউপির জনগণ রাজপথে নেমে আসেন আন্দোলন করতে। এই ঘটনায় বেশ কিছু দিন আন্দোলনও চলে।
এদিকে এসব হত্যাকাণ্ডের পর কয়েকটি হত্যা ঘটনায় পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-জনযুদ্ধ) হত্যার দায়দায়িত্ব স্বীকার করে। কিন্তু প্রতিটি রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিয়ে চলে নানামুখী কথা ও সন্দেহ-সংশয়।
প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক অঙ্গনের গডফাদারের গ্রিন সিগনাল পাওয়ার পরই এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে প্রতিটি দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনার ঝড় ওঠে।
অনেক সন্দিগ্ধ নেতা নিজেকে বাঁচাতে বিভিন্ন টালবাহনাও শুরু করেন। যেভাবেই হত্যার ঘটনা ঘটুক না কেন অধিকাংশ হত্যার প্রকৃত ঘটনা আলোর মুখ দেখেনি। হত্যার ঘটনায় তাদের স্বজনরা পেতে চান প্রকৃত বিচার। শাস্তি হোক যথাযথ এই দাবি জানান স্বজনরা।
চেয়ারম্যান জাহিদের হত্যা যে কারণে হোক না কেন তার স্বজনরাও হত্যার প্রকৃত ঘটনা দেখতে চান। বিচার পেতে চান। শাস্তি হোক প্রকৃত হত্যাকারীদের, এটাই তাদের দাবি।
২০.০৫.২০১৩ :: ইয়ামিন আলী, বিশেষ প্রতিনিধি,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।