বাগেরহাটের রামপালে বখাটেদের যৌন হয়রানী ও মারপিটের শিকার বহুল আলোচিত কলেজ ছাত্রী রাবেয়া আত্মহননের ঘটনায় গিলাতলা আবুল কালাম ডিগ্রী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজুসহ ৪ জনকে আসামী করে অবশেষে রামপাল থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করেছে।
মঙ্গলবার রাতে নিহতের মা সালেহা বেগমের লিখিত অভিযোগটি ৩৭দিন পর আমলে নিয়ে রামপাল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আনোয়ার হোসেন মামলা রেকর্ড করেন।
মামলায় আসামীরা হলো, ছাত্রলীগ নেতা রাজু শেখ, নুর ইসলাম ও তার পিতা আনিচ মল্লিক এবং নিহতের সহপাঠী শাহিনা খাতুন। বখাটেদের সহযোগিতার অভিযোগে চলমান এইচ এস সি পরিক্ষার্থী নিহতের সহপাঠি শাহিনা খাতুনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ সকালে গিলাতলা আবুল কালাম ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী রাবিয়াকে তার সহপাঠি শাহীনা কলেজে ডেকে নিয়ে যায়। কলেজ থেকে দুপুরে ফেরার পথে রাজু শেখ গীলাতলা বাজারে এসে রাবেয়াকে শাহীনার সামনে পথ রোধ করে দাঁড়ায়।
এসময় রাজু ও তার সহযোগিরা রাবেয়াকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে এবং ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে রাবেয়া ও শাহীনা ভ্যান যোগে বাড়ী ফেরার পথে ভ্যানের গতিরোধ করে লম্পট নূর-ইসলাম ভ্যানের পিছনে জোরপূর্বক উঠে রাবেয়াকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং গাববুনিয়া ব্রিজের কাছে আসলে ভ্যান থেকে সবাই নেমে পড়ে। রাবিয়া ব্রিজে উঠার সময় নূর-ইসলাম রাবেয়ার পথ রোধ করে তাকে তার সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
এ সময় শাহীনা রাবেয়াকে নূর-ইসলামের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্য চাপ দেয়। রাবেয়া এতে রাজি না হওয়ায় প্রথমে নূর-ইসলাম তাকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ সময় রাবেয়া চলে আসতে থাকলে নূর-ইসলাম তার হাত চেপে ধরে উপুর্যুপরি চড়, কিল, ঘুষি মারে। রাবেয়া এসময় ডাক চিৎকার দিলে স্থানীয় ফিরোজ মল্লিক, আলামিন শেখসহ অন্যান্যরা নূর-ইসলামের হাত থেকে উদ্ধার করে রাবেয়াকে বাড়ী পৌছে দেয়।
এ অবস্থায় মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে গত ১৬ মার্চ রাতে রাবেয়া ঘরের পাশে গাছের সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহনন করে। নিহতের মা মোসা: সালেহা বেগম গত ২১ মার্চ ২০১৩ তারিখ রামপাল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আলমগীর হোসেন বিভিন্ন রকম তাল বাহানা করতে থাকে সর্ব শেষ ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলা রেকড করা হবে। এরপর এবিষয়টি নিয়ে নারীবাদি ও মানবাধিকার সংগঠন গুলোর মধ্যে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
মঙ্গলবার বিকালে কলেজ ছাত্রী রাবিয়া আত্মহননের প্ররোচনাকারীদের বিচারের দাবীতে রামপাল থানার সামনে মানবাধিকার সংগঠন ও এলাকাবাসি মানববন্ধন পালন করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা গ্রহনের আল্টিমেটাম দেয়। ৩৭দিন পর আল্টিমেটামের ৪ঘন্টার মধ্যে পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেছে।
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আনোয়ার হোসেন জানান, মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে ।