বাংলাদেশে সুন্দরবনের পাশে বসবাসকারী উপকূলীয় সম্প্রদায়ের নারীরা কীভাবে প্রকৃতি ও তাদের গ্রামকে রক্ষা করে চলেছে এবং পাশাপাশি এর মাধ্যমে তাদের জীবিকারও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে দ্য থার্ড পোলের প্রতিবেদনে।
জোয়ারের সময় সুন্দরবন থেকে নদী-খাল হয়ে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ গাছের ফল পানিতে ভেসে আসে বন সংলগ্ন গ্রামগুলোর দিকে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এই ম্যানগ্রোভ ফল সংগ্রহ এবং বিক্রি জনপ্রিয়।
বহু বছর ধরেই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নে শিল্পী রানী ( ৪৫) সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা ম্যানগ্রোভ গাছ কেওড়ার ফল সংগ্রহ করেন। যা তার জীবিকা নির্বাহে সহায়ক। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় তাদের গ্রাম রক্ষা বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই গ্রামে লোনা পানি অনুপ্রবেশের ফলে পাশের অনেক গাছ মারা যায়। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও, আশেপাশের গ্রামবাসীরা জ্বালানির জন্য কাঠের তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয় সেসময়।
বন্যার পানি সরে গেলে রানী ও গ্রামের অন্যান্য নারীরা আবার কেওড়া ফল সংগ্রহ করতে শুরু করেন। কিন্তু এবার তার সাথে যুক্ত হয় ম্যানগ্রোভ বা বাদাবন বনায়নন। এই ম্যানগ্রোভ বনায়ন তাদের জ্বালানী ও আয় উৎস নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
ধীরে ধীরে পদ্মপুকুরের পিছিয়ে পড়া বাসিন্দারা বুঝতে শুরু করেন ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধারের আরেকটি বিশেষ সুবিধার বিষয়টি। সেটি হচ্ছে এই গাছগুলো তাদের বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ছোট-বড় ঝড়ের কবল থেকে তাদের গ্রামকে সুরক্ষা দেয়। তারা দেখতে পায় যেসব বন্যা-নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ম্যানগ্রোভ বনায়ণ করা হচ্ছে সেখানে এই গাছগুলো একটি সুরক্ষা ঢাল হিসেবে গ্রামগুলোকে বাঁচিয়ে রাখছে। শুরু হয় ম্যানগ্রোভ বনায়ন। আর এসব গাছের অতিরিক্ত ফল দিয়ে তারা জ্যাম ও আচার তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করে গ্রামের অধিবাসীরা। এটি পরিবারের আয়ের একটি অন্যতম অংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় যা পদ্মপুকুরের নারীদের ক্ষমতায়ন বাড়িয়ে দেয়।
পদ্মপুকুরের আরেক বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন। তিনি কেওড়া ফল সংগ্রহ করে এর থেকে চারা রোপণ করে পুেরা বিষয়টিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর তিনি সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ প্রজাতির চারা সংগ্রহ করে তার বাড়ির পাশে বাঁধে রোপণ করতে শুরু করেন। পরে, স্থানীয় এনজিও ফ্রেন্ডশিপের সহায়তায়, তিনি ১৫জন নারীকে সঙ্গে নিয়ে একটি দল গঠন করেন যারা স্থানীয়দের সাহায্যে ম্যানগ্রোভ বনায়নের কাজ শুরু করেন। কারন রাবেয়া এবং অন্যান্য গ্রামবাসী বুঝতে পেরেছিলেন ম্যানগ্রোভ না থাকলে সুন্দরবনের আশেপাশে থাকা তাদের বাড়িঘর একসময় বন্যা আর সাইক্লোনের ফলে বিলীন হয়ে যেতে পারে অচিরেই। তারা আরো বুঝতে পেরেছিলেন যে এই ম্যানগোভই তাদের জীবন-জীবিকা আর সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষা দায়িত্ব পালন করবে।
ম্যানগ্রোভ এবং জলবায়ু সহনশীলতা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বঙ্গােপসাগরে সৃষ্ট সাইক্লোনগুলো অনকে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, উপকূলীয় এলাকাগুলোতে লবনাক্ততার প্রকোপ বাড়ছে দিনের পর দিন ।জলবায়ু পরিবর্তনের এই নিদারুন প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সুন্দরবন সত্যিকার অর্থেই একটি ঢাল হিসেবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে দিনকে দিন সুন্দরবনের ভূমিকা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে উপকূলে বসবাসকারী পিছিয়ে পড়া এই সব জনগোষ্ঠীর কাছে। মাটি ও পানি লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে, ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আর তাই কৃষকরা এখন জীবিকা নির্বাহেরবিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে যে জনগোষ্ঠী সহনশীল নয়, তারা স্বাভাবিকভাবেই নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়ে থাকে এবং তাদের জন্য এক প্রকার অনিশ্চিত এবং বিপজ্জনক জীবিকার জন্য বাধ্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ২০০৯ সালে, পদ্মপুকুরের বসন্ত মন্ডল তার কৃষি খামারটি হারান কারন সাইক্লোনের পরে লবণাক্ত পানি ঢুকে তার ফসল ফলানোর মাটি কৃষির জন্য অনুর্বর হয়ে পড়ে। জীবিকার জন্য তিনি সেসময় পুরোপুরি সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। দ্য থার্ড পোলকে তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড় আইলার আগে আমি আমার জমিতে ধান চাষ করতাম। কিন্তু বন্যার পানিতে আমি সেই জমি হারিয়েছি। লবণাক্ততার কারণে আমার জমিতে এখন কিছুই জন্মায় না। এখন কাঁকড়া ও মধু সংগ্রহ করতে বনে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো বিকল্প নেই।”
বসন্ত মন্ডলের মতো, অনেকেই মধু সংগ্রহ করতে বা কাঁকড়া ও মাছ ধরতে সুন্দরবনের গভীরে যাচ্ছে যারা আগে কৃষি জমিতে ফসল ফলানাোর কাজ করতেন। অথচ সুন্দরবেনর মতাে এই বিপদসংকুল জঙ্গলে এগুলো একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কারন জঙ্গলে রয়েছে বাঘ, কুমির এবং সাপের আক্রমনের ভয়। এদিকে জঙ্গলের ভিতরে নদী আর খালে অতিরিক্ত আহরনের ফলে মাছের পরিমাণও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
সন্ধ্যা রানী মন্ডল সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের মীরগঞ্জ গ্রামে বাস করেন। তিনি গ্রামের কাছাকাছি নদী থেকে মাছ এবং কাঁকড়া ধরতেন, কিন্তু সবসময়ই তিনি সেখানে বাঘ বা সাপের আক্রমনের ভয় থাকতেন। স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন ম্যানগ্রোভ রোপণ করেন এবং চারা বিক্রি করেন। সেখানকার অনেক পরিবারেই ম্যানগ্রোভ চাষ এখন আয়ের অন্যতম নিরাপদ এবং নিশ্চিত উৎস।
সরকারও উৎসাহিত করে ম্যানগ্রোভ সৃজন
ম্যানগ্রোভ সৃজনের এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উপকূল জুড়েই। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের দ্য থার্ড পোলকে বলেন, “সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার বিভন্ন চর ও বাঁধে নারীদের নেতৃত্বে ম্যানগ্রোভ রোপনের উদ্যোগের মাধ্যমে আমার জানা মতে অন্তত ১০০ একর [৪০ হেক্টর জমিতে সক্ষম হয়েছি। ] জমিতে নতুন বন সৃজন করা সম্ভব হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে চলা এই উদ্যোগে অন্তত ১৫০০ প্রান্তিক নারী জড়িত রয়েছে।”
আবু নাসের মহসিন হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার ১৯৬০ সাল থেকে সুন্দরবনের পূর্বের উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ সৃজনের বনায়নের কাজ করছে। “এই উদ্যোগের অধীনে, আমরা বরগুনার পাথরঘাটা থেকে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী পর্যন্ত একটি উপকূলীয় সুবজ বেষ্টনী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এর মাধ্যমে অস্থায়ী চরগুলো ধীরে ধীরে স্থায়ী ভূমি গঠনে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা মনে করি ম্যানগ্রোভ সৃজনের মাধ্যমে আমরা আমাদের মোট জমি ও বনের পরিমান কমপক্ষে এক শতাংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।”
মহসিন হোসেন দ্য থার্ড পোলকে বলেন, “বনায়নের জন্য চারা সংগ্রহের এই উদ্যোগ পরিবেশ রক্ষায় খুবই কার্যকর। আর এখানে নারীদের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। আমরা বিশ্বাস করি যে এই কাজে তাদের সম্পৃক্ততা ম্যানগ্রোভ সৃজনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।”
হোসেন উল্লেখ করেন, ভাসমান অবস্থায় অনেক ম্যানগ্রোভ প্রজাতিই বীজের মাধ্যমে পরাগায়ন করে। তারা যেখানে মাটি পায় সেখানেই প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। তিনি বলেন, “গবাদি পশুর চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এই গাছগুলি ভালভাবে বেড়ে উঠতে পারে। বাঁধের পাশে ম্যানগ্রোভ বনায়ন খুবই কার্যকর। ম্যানগ্রোভ একটি সাধারণ গাছের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি কার্বন শোষণ করে। উপকূলীয় বনায়নের মতো উদ্যোগ কার্বন নিঃসরণ শোষণ এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
উপকূলীয় মানুষের জীবন এখনও অনিশ্চিত
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবনাক্ত পানির অনুপ্রবেশের কারণে জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠছে, বিশেষ করে নারীদের জন্য এটি একটি ভয়াবহ সমস্যা। সাতক্ষীরার আবাদ চন্ডিপুর গ্রামের মাশকুরা খানম বলেন, “বিয়ের দুই বছর পর আমি প্রথম গর্ভধারণ করি। কিন্তু আমার গর্ভপাত ঘটে। আমি আরও দুই বার গর্ভধারণ করি পরবর্তীতে। কিন্তু প্রতিবারই আমার গর্ভপাত ঘটে। স্থানীয় মানুষ অনেকেই আমার সাথে ভিন্ন আচরণ করে কারণ আমি কোনো সন্তান জন্ম দিতে পারিনি। এটা আমাকে মারাত্বকভাবে মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে।”
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরে অবস্থিত ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার এলিজাবেথ সরকার দ্য থার্ড পোলকে বলেন, এখানকার মানুষ যে পানি পান করে তাতে উচ্চ লবণাক্ততার উপস্থিতি রয়েছে। ফলে অনেকেই, বিশেষ করে নারীরা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যায় ভোগেন। “ফলে গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় বেশিরভাগ মানুষই স্নানের জন্য পুকুরের পানি ব্যবহার করেন। এ কারণে তারা প্রায়ই ত্বক এবং যৌনাঙ্গের সংক্রমণে ভুগে থাকেন। এখানে পুকুরগুলোও লবণাক্ত।
যেসব নারীরা ম্যানগ্রোভ রোপণ করেন তারা তাদের পদক্ষেপকে এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে একটি লড়াই হিসেবে দেখেন। তারা এখন শুধু বাঁধের পাশেই নয়, সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া নদী এবং খুলনার কালিঞ্চি নদীর মতো অনেক নদীর তীরেও ম্যানগ্রোভ সৃজন করে চলেছেন।
বেসরকারী সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের ক্লাইমেট অ্যাকশন প্রোগ্রামের কাজী আমদাদুল হক দ্য থার্ড পোলকে বলেন, এই কার্যক্রমগুলি নতুন ম্যানগ্রোভ বাগানে মালিকানার একটি বোধ দেয়। আমাদের মতো অনেক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বনায়ন সম্প্রসারণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সরকারের একটি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচী রয়েছে যার অধীনে স্থানীয় জনগোষ্ঠী তাদের রোপণ করা গাছ থেকে ফল এবং শুকনো কাঠ সংগ্রহ করতে পারে। তবে এটি তারা করতে পারে গাছের ক্ষতি না করে।
হক বলেন শ্যামনগর শহরের কাছে স্থানীয় এক বেসরকারী সংস্থা সুশীলনের নেতৃত্বে নামের স্থানী বাসিন্দারা প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ সৃজন করেছে, যেখানে নারীরা সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুরনো গাছ রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি আরও কয়েকশ হেক্টর জমিতে রোপণের প্রস্তুতি চলছে।
বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ক্রমাগত নজরদারি প্রয়োজন, বিশেষ করে গৃহপালিত পশু যেমন গরু, ছাগল এসব চারা নষ্ট করে ফেলে। পদ্মপুকুর এবং আশেপাশের অন্যান্য গ্রামে, পুরুষরা এখন নারীদের সাথে বৃক্ষরোপণ এবং পরবর্তী রক্ষাবেক্ষণ করতে টহল দেয়। গাছপালা পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে প্রতি হেক্টরের জন্য একজন নারীকে সুপারভাইজার নিযুক্ত করা হয়।
হক বলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ২২টি গ্রামে ম্যানগ্রোভ বনায়ন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১,৫০০ জন বাসিন্দা এই প্রোগ্রামের সাথে জড়িত, এবং তাদের মধ্যে ১,০০০ এরও বেশি নারী।
অনিতা রানী মন্ডলএদের মধ্যে একজন সুপারভাইজর। তিনি বলেন, “আমরা জাল দিয়ে চারা ঢেকে দিয়েছি যাতে গরু এবং ছাগল চারাগুলো নষ্ট করতে না পারে। আমরা সময়ে সময়ে জাল মেরামত করি। যখন গাছ বড় হবে, তখন কোনো ঝড় আমার বাড়ি বা বাঁধকে আর নষ।ঠ করতে পারবে না। “
সৃজনের এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ছে সাতক্ষীরার বাইরে
অপর এক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিইডিএস), সাতক্ষীরার পাশের জেলা খুলনার দাকোপ উপজেলাতে ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ এবং ম্যানগ্রোভ-ভিত্তিক চিংড়ি চাষের প্রচার করছে। সেখানে পাঁচটি ম্যানগ্রোভ নার্সারি স্থাপন করা হয়েছে, যার সবগুলোই নারীদের নেতৃত্বে। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরে এনজিওর ম্যানগ্রোভ নার্সারিতে কয়েক শত নারী কাজ করেন। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী মাকসুদুর রহমান দ্য থার্ড পোলকে বলেন, “আমরা স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে চারা প্রদানের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ রোপণে উৎসাহিত করছি। আমরা বন থেকে সংগ্রহ করা মধু এবং আচারের মতো বিভিন্ন পণ্যের প্রচার করছি। তাদের পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষ নিজেরাই ম্যানগ্রোভ রক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে।
দাকোপের বাণীশান্তা শহরের আশপাশে ২০টি জায়গায় ম্যানগ্রোভ ভিত্তিক মাছ চাষ শুরু হয়েছে। যারা আগে তাদের জীবিকার জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের উপর নির্ভর করত তারা এই খামারগুলিতে এখন কাজ করেন। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাটি ম্যানগ্রোভ-ভিত্তিক মাছ চাষের বিষয়ে ১২,৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী মাকসুদুর রহমান।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ওয়াসিউল ইসলাম দ্য থার্ড পোলকে বলেন, “গ্রামবাসীকে ম্যানগ্রোভ চাষ শুরু করতে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমরা শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগই তৈরি করছি না, বনের ওপর চাপও কমাচ্ছি।”
প্রতিবেদনটি The Third Pole এ প্রকাশিত।
টিটিপি/আইএইচ/বিআই/৯ মার্চ, ২০২২