বিশেষ প্রতিনিধি, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সুন্দরবন থেকে শিকার করে আনা বেঙ্গল টাইগারের একটি চামড়া বিক্রি করতে চান এক ব্যক্তি—এমন খবর পেয়ে ক্রেতা সেজে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন বন বিভাগের লোকজন। তিন–চার দিন ধরে দর–কষাকষি শেষে দাম নির্ধারণ হয় ১৩ লাখ টাকা। অবশেষে বিক্রি করতে এসে চামড়াসহ আটক সে।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সুন্দরবন–সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজারের পাঁচ রাস্তা মোড় এলাকা থেকে বন বিভাগ ও র্যাব–৮–এর যৌথ তাঁকে আটক করে।
আটক ওই ব্যক্তির নাম গাউস ফকির (৪৫)। তিনি শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ সাউথখালী এলাকার মৃত রশীদ ফকিরের ছেলে। বন বিভাগ বলছে, গাউস বাঘসহ বন্য প্রাণী শিকার ও পাচারের সঙ্গে জড়িত।
উদ্ধার হওয়া বাঘের চামড়াটি ৮ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা ও ৩ ফুট ১ ইঞ্চি চওড়া। চামড়াটি সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে কাছে সংরক্ষণের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। আটক গাউস ফকিরকে বন আইনে মামলা দায়েরের পর বুধবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বন্য প্রাণী নিধন আইনে বাঘ হত্যার অপরাধে একটি মামলা দায়ের করে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আটক ব্যক্তি একটি বাঘের চামড়া বিক্রির চেষ্টা করছেন, এমন খবর পেয়ে ক্রেতা সেজে চামড়াটি কেনার জন্য গেল ৩-৪ দিন ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছিল সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের একটি দল। তার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে দর–কষাকষি শেষে ১৩ লাখ টাকা চুক্তিতে চামড়াটি বিক্রিতে রাজি হন তিনি। পরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী র্যাব-৮–এর সহযোগিতায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সন্ধ্যায় টাকা দিয়ে চামড়া নেওয়ার সময় গাউস ফকিরকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
বুধবার দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের কার্যালয়ের ব্রিফিং ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার গাউসের বিরুদ্ধে এরআগে বন বিভাগের কোন অভিযোগ না থাকলেও তাঁর ফকির বাড়ির (বংশের )অন্য লোকজনের বিরুদ্ধে সুন্দরবনের বাঘ ও হরিণের চামড়া পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাঘটিকে সুন্দরবনের কোন এলাকা থেকে এবং কতদিন আগে শিকার করে হত্যা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। গ্রেপ্তার গাউসের সাথে আর কারা জড়িত রয়েছে তা সে স্বীকার করেনি। তারা একটি চক্র, জড়িত অন্যদের ধরতে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
গ্রেপ্তার গাউস ফকির সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘বাঘ আমি হত্যা করিনি। আমার পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তি এই চামড়া আমাকে বিক্রি করতে দিয়েছে। ওই ব্যক্তিই বাঘটিকে হত্যা করেছে, তবে কবে করেছে তা আমি জানিনা। চারদিন আগে সে আমাকে এই চামড়াটি দিয়েছে। আমি পেশায় জেলে। সাগরে মাছ শিকার করি। সেও সাগরে মাছ ধরে।’
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের মৌসুমে সে মধু সংগ্রহ করে দাবি বলে গাউস বলে, আমাকে যে চামড়াটি দিয়েছে তাঁর নাম ওহিদুল। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সে আমাকে চামড়াটি দিয়ে বলেছে, সাত লাখ টাকা বিক্রি করে দিতে পারলে দেড় লাখ টাকা দেব। আর শরণখোলার সাউথখালি গ্রামে ওবায়দুল করিম নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বাঘের এই চামড়াটি বিক্রির মধ্যস্ততা হয় বলেও দাবি করে গাউস।
এসআই/আইএইচ/বিআই/২৯ জানুয়ারি, ২০২১/আপডেট