নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
‘ঝড় বাদল দেহে বাড়িই তারাবির নামাজ পড়তিলাম। প্রচন্ড ঝড়বাতাসে শো শো শব্দ, সালাম ফিরায় দেখি সব তলায় যায়। কখন যে নদীর বাঁধ ভাইঙ্গে সব তলায় গেল আমরা কিছু টিয়ারই পাইনি। উঠোনে পানি দেখতি দেখতি ঘরও তলালো। কই যাবো, পরে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেই।’
এভাবেই ঝড়ের রাতে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন ষাটোর্দ্ধ লুৎফার রহমান। তাঁর বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার ভদ্রভাড়া গ্রামে। লুৎফারের ভাষ্য, সিডর-আইলাতেও এত পানি দেখেন নি তিনি।
ঝড়ের রাতে জোয়ারের সময় শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা দড়াটানা নদী তীরের গ্রাম রক্ষা বাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় ভদ্রপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী আরও দুটি গ্রাম।
লুৎফার বলেন, বাইরে বেরিয়ে দেখি হু হু করে পানি ঢুকতিছে। তখন দৌড়ে পাশের একটি বিল্ডিং আলা বাড়িতে যাইয়ে উঠি। প্রথমে ঘরের পাটাতনে উঠে থাকতে চাইছিলাম। কিন্তু তখন আমার সিডরের কথা মনে পড়ে। সে সময় অনেকে পাটাতনে আশ্রয় নিয়েও পানিতে ডুবে মারা গেছিল শরণখোলায়।
পানি কমতে শুরু করলে সেহরীর একটু আগে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফেরে লুৎফার। বাড়িতে এসে দেখেন ফ্রিজ আসবাবপত্রসহ সব ভিজে গেছে। ঘরের মধ্যে খাট পর্যন্ত পানি উঠেছিল। সেহরিও আর করতে পারেননি তিনি।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাগেরহাট জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৩০০ মিটার বাঁধ সম্পূর্ণ এবং ৮ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর বাইরে বেড়িবাঁধ নেই এবং ছোট ছোট গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম।
ভদ্রপাড়া খেয়া ঘাটের মাঝি মাহাবুবুর রহমান রহমান বলেন, ‘আমাগো এলাকায় কখনও পানি ওঠেনা। শুনছি ঝড় নাকি ভারতের দিক দিয়ে গেছে। আমরা তো অনেক দূরে। এদিক আসলে কি হত আল্লাহই জানে!’
জেলা প্রশাসনের হিসেবে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জোয়ারের পানির তোড়ে বাগেরহাটে ৩৪৭ টি ঘর সম্পূর্ণ এবং ৪ হাজার ৩৪৯টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভেসে গেছে ৪ হাজার ৬৩৫টি মৎস্য ঘের। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমনের বীজতলা, পান, সবজি, কলাসহ ১৭শ হেক্টর জমির ফসল। বৃহস্পতিবারও জেলার কয়েকটি স্থানে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের সময় প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি এলাকা।
এসআই/আরএস/বিআই/২১ মে, ২০২০