নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
‘সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্পানে’র প্রভাবে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে।
মঙ্গলবার (১৯ মে) সকাল থেকেই উপকূলের আবহাওয়া ছিল মেঘলা। তবে দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ২০০৭ সালের উপকূলে আঘাত হানা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের চেয়ে অধিক গতি নিয়ে আসছে আম্পান। ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে সিডর বিধ্বস্ত বাগেরহাটের উপকূলীয় জনপদগুলোতে।
আর ঘূর্ণিঝড়টি জোয়ারের সময় আঘাত হানলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ – ১২ ফিট পানি বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বেঁড়িবাধ আছে এমন এলাকাও প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবন রয়েছে। কারণে বর্তমান বাঁধগুলোর সর্বচ্চ উচ্চতা ৮ ফুঁট পর্যন্ত।
সোমবার বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর থেকেই সতর্ক করে মাইকিং করা হচ্ছে জেলা উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। খুলে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।
মঙ্গলবার (১৯ মে) বেলা ১১টার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সরকারের সব দপ্তর বিভাগ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় জানানো হয়, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি ও শুননো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা পরিস্তিতি বিবেচনায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নিয়মিত আশ্রয় কেন্দ্রর পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবহার উপযুগী ভবনকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত হানা বিবেচনায় নিয়ে সব ধরনের প্রস্ততি নেয়া হয়েছে। ঝড় পরবর্তী প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। জেলার ৩৪৫ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি করোনা পরিস্তিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবহার উপযুগী ভবন মিলিয়ে মোট ৯৭৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। যেখানে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। একই সাথে মানুষ স্থানীয় মানুষ যাতে তাদের গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে পারে সে জন্যও প্রস্তুতি রয়েছে।
দুপুরের পর থেকে আমরা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সারিয়ে আনার কাজ শুরু করেছি। ইতমধ্যে কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছে। সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে মানুষকে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে কাজ করছি।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উপকূলের মানুষের মাছে আত্মঙ্ক আরও বেড়েছে। সিডর বিধ্বস্ত জেলার শরণখোলা উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের গাবতলা এলাকায় বেড়িবাঁধের প্রায় দৃুই কিলোমিটার অংশ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়ে সাথে জলচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকায় ওই এলাকায় বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গাবতালা এলাকার বাসিন্দা মো. ইসমাইল বলেন, আমাদের এই বাড়েবাঁধের কাঁজ চলছে গত তিন চার বছর ধরে। এখন এর কাজ শেষ হয়নি। দু সপ্তাহ আগেও বাঁধ ভেঙেছে। এখন সিডরের মত পানি হয়ে এই এলাকা ভেসে যাবে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) শরণখোলা উপজেলার অহিদুজ্জামান ডালিম বলেন, শরণখোলায় আমাদের ৪৫টি ইউনিট আছে। প্রতিটি ইউনিটে ১৫ জন করে সেচ্ছ্বাসেবক আছে। উপজেলার ১১৩ টি সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় স্বাস্থ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ জেলা ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া জ্বরসহ করোনার উপসর্গ থাকলে তাদের পৃথকভাবে রাখার উদ্যোন নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনের তাদের স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনে নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, জেলার মোংলা উপজেলাতে কোন বেড়িবাঁধ নেই। এছাড়া রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশে বেড়িবাঁধ নেই। অতিরিক্ত জোয়ারে এসব এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া শরণখোলাসহ অনান্য এলাকা মিলেয়ে জেলায় বেড়িবাঁধের ৩টি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের যে বেড়িবাঁধগুলো আছে নদীতে পানির চাপ ৮ ফিট পর্যন্ত বাড়লে তা প্রতিরোধ করতে পারবে। তবে পানির চাপ আরও বেশি হলে বাঁধ উপচে লোকালয়গুলোতে পানি প্রবেশ করতে পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এসআই/আইএইচ/বিআই/১৯ মে, ২০২০