সুন্দরবনের এবারের রাস উৎসব হচ্ছে না
বাগেরহাটে প্রস্তুত ২৩৪ আশ্রয় কেন্দ্র
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ার শঙ্কায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলার ২৩৪টি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ঝড়ের পূর্বাভাস বাড়ার সাথে সাথে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে উপকূলের মানুষদের সরিয়ে নিতে কাজ করবে সেচ্ছাসেবকরা। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বেলা এগারোটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সভার আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার শাখার উপ পরিচালক দেব প্রসাদ পাল, বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি আহাদ উদ্দীন হায়দারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সভায় জেলার সবকটি উপজেলার ইউএনও, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সেচ্ছ্বাসেবক সংগঠন, এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শেষ সুন্দরবনের দুবলার চরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হতে যাওয়া রাস উৎসব বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১০ নভেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে তিনদিনের এই রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে সকাল থেকে মেঘলা আকাশ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে।
তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোংলা বন্দরে অবস্থান নেওয়া জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক ছিল। যদিও বিপদ সংকেট জারির পর বন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব এবার বেশি হবার আশঙ্কা করছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) কর্মীরা। পূর্ণিমার সময় উপকূলের নদ-নদীতে পানির চাপ সাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে।
তাই এই সময় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে উপকূলের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হলে জানমালের বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাওবো) বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, জেলার শরণখোলা উপজেলা ৩৫/১ পোল্ডারের দুটি অংশ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে কাছ চলছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থনে কয়েকটি সাব ফোল্ডার ও রিং বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। দুর্যোগে যেন বাঁধ গুলো ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে জন্য কাজ শুরু হয়েছে।
দুবলাচর রাস উৎসব জাতীয় কমিটির সহ সভাপতি বাবুল সরদার বলেন বলেন, আগামী ১০ নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের দুবলারচরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন ঘুর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য আমরা কমিটি রাস উৎসব বন্ধ ঘোষণা করেছি।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সভা করেছে। জেলায় মোট ২৩৪টি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এই আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় সোয়া দুই লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। তাদের জন্য এগুলো খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া সকল উপজেলাতে একটি করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। বিকালে উপজেলাগুলোতে প্রস্তুত সভা হয়েছে। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
সুন্দরবন ও সাগরে নতুন করে কাউকে যাওয়ার অনুমতি না দিতে সিদ্ধান্ত হয় সভায়। এদিকে ফিরতে শুরু করেছে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে-ট্রলার।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দীন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, মোংলা বন্দরে বর্তমানে কয়লা, ইউরিয়া সার, পাথর, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকারসহ ১২ টি জাহাজ বন্দরে অবস্থান করছে। আরও দুটি নতুন জাহাজ বন্দরে ভেড়ার কথা রয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ধেয়ে আসার খবরে বন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। বন্দরে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেতের মধ্যেও মোংলা বন্দরে অবস্থান নেয়া জাহাজে মালামাল ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক ছিল।
আবহাওয়া অধিদফতর ৭ নম্বর সংকেত দেখাতে বলায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণভাবে ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি’ করেছে। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সাথে সাথে নিজস্ব জাহাজগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
এসএইচ/এসআই/বিআই/৮ নভেম্বর, ২০১৯