ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে আটক দালালের তিন মাসের কারাদণ্ড, বিআরটিএ’র এক কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত। ঘুষের ১৫ হাজার টাকা ফেরত প্রদান।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বাগেরহাটে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের পুরাতন কোর্ট চত্বরের বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান কলে ঘুষের টাকাসহ দুজনকে আটক করে দুদক।
পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার নামে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার দায়ে এক দালালকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়। এ সময় সেবা নিতে আসা গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মচারী মো. মজিবর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।
দণ্ডপ্রাপ্ত দালাল মিঠু মিয়া বাগেরহাট শহরের দশানী এলাকার তারা মিয়ার ছেলে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের নির্বাহী হাকিম মো. ইসতিয়াক আহম্মেদ তাকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা) উপপরিচালক মো. নাজমুল হাসান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বিআরটিএর বাগেরহাট কার্যালয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে বলে দুদক হেল্প লাইন ১০৬–এ ফোন করে অভিযোগ জানান একজন ভুক্তভোগী। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মিঠু ও বিআরটিএ কার্যালয়ের একটি প্রকল্পের সিল মেকানিক মো. মজিবর রহমানকে আটক করা হয়।
তাঁদের কাছ থেকে গাড়ির কাগজপত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা ঘুষের টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে আদায় করা ঘুষের ১৫ হাজার টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হয়।
অভিযানের পর বাগেরহাট বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে গ্রাহক ছাড়া কোনো দালালের প্রবেশ নিষিদ্ধ প্রচারণামূলক ব্যানার টানানোর নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘুষ বন্ধে বিআরটিএ কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক মো. মেহেদী হাসানকে সতর্ক করা হয়। ওই পরিদর্শকের বিরুদ্ধে দালালের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আছে। তবে অভিযান চালিয়ে অফিসের ড্রয়ার ও আলমারি তল্লাশি করে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি।
বিআরটিএ বাগেরহাট কার্যালয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও গত চার মাসে ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাননি। এই অফিসের লোকজন আজ না কাল দেবেন বলে ঘোরাচ্ছেন। পরে তাঁকে ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ফেরত দেন মজিবর রহমান।
জাহিদুর রহমান নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, বাগেরহাট বিআরটিএ কার্যালয়ে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এই কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক মো. মেহেদী হাসানের যোগসাজশে মিঠু নামের স্থানীয় এক দালাল সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির নিবন্ধনের কাগজপত্র করে দিতে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন।
বিআরটিএর বাগেরহাট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, তাদের কার্যালয়ের একটি প্রকল্পের অস্থায়ী সিল মেকানিক মজিবরের কাছে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায়ের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তাই তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দালালের প্রবেশ নিষিদ্ধ প্রচারণামূলক ব্যানার টানানো হবে।
আগামীতে বিআরটিএ কার্যালয় দালাল ও ঘুষমুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
এসএইচ/এসআই/বিআই/২১ অক্টোবর, ২০১৯