‘সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে’র জের
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট সদরের রণবিজয়পুর এলাকায় কিশোরের ছুরিকাঘাতে তালিম মল্লিক (১৯) নামের অপর এক কিশোর খুন হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে মৃত অবস্থায় নিহত কিশোরকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনা হয়। এরআগে বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়ক থেকে হযরত খানজাহান (রহ:)-এর মাজারে ঢোকার প্রবেশ পথে নির্মাণাধীর মাজার ফটকের (গেট) কাছে ওই ঘটনা ঘটে।
নিহত তালিম মল্লিক মাজার সংলগ্ন বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের সিংড়াই গ্রামের ইয়াসিন মল্লিকের ছেলে। বাগেরহাটের সরকারি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের (টিভিআই) দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র তালিম ছাত্রলীগ কর্মী ছিল।
নিহতের অন্তত ছয় বন্ধুর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানায়, প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায়ই সমবয়সী বন্ধুরা মহাসড়কের মাজার মোড়ে চা খেতে যেত। শুক্রবার সন্ধ্যায়ও তাঁরা এক সাথে বসে চা পান করেন। কিছুক্ষণ পর নিজের মুঠোফোনে রিচার্জ করতে তালিম উঠে যায়। কিছু দূর যেতে নির্মাণাধীন একটি গেটের কাছে রাজা ফকির নামের সমবয়সী এক কিশোর সাইকেল থেকে নেমে তালিমের বুকে ছুরি মারে। পরে রাজা মাজারের দিকে চলে যায়।
ঘটনার পর স্থানীয়দের সহায়তায় রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তালিমকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. রাফিউল হাসান সাংবাদিকদের জানান, ‘হাসপাতালে আনার আগেই ওই কিশোরের মৃত হয়। নিহতের বুকের বাঁ দিকে আঘাতের ক্ষত ছিল।’
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাদ আসর নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন করা হয়।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে তালিমের মরদেহ তাঁদের বাড়িতে আনা হয়। এসময় সেখানে স্বজন-প্রতিবেশী ভিড় আর কান্নার রোল। নিহতের বন্ধুরাও ছিল সেখানে। ঘটনার সময় কাছেই থাকার পরও বন্ধুকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ ছিল তাদের মাঝে।
হত্যাকাণ্ডের সাড়ে জড়িদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
নিহতের সমবয়সী চাচাতো ভাই আমিনুল মল্লিক ও বন্ধু ইমন আহম্মেদ
বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘যে ছেলেটা মারছে সে আমাদের থেকে দুই আড়াই বছরের বড় হবে। মূলত “সিনিয়র জুনিয়ার বিরোধ” থেকে এই ঘটনা।’
কাছাকাছি এলাকার হওয়াতে রাজা ও তালিম ছিল পূর্ব পরিচিত। গেল বুধবার তালিম মাজারে ঘুরতে গেলে রাজাকে ‘নাম ধরে ডাকা’ নিয়ে তার সাথে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। সেই দন্দ্বের সূত্র ধরে রাজা একা পেয়ে তার উপর হামলা চালায়।
রাজা ও তালিমের সাম্প্রতিক দন্দ্বের বিষয়টি জানত দুই পরিবারের লোকজনই। তালিম ঘটনার পর পরই তার বন্ধুদের ফোনে বিষয়টি জানিয়েছিল।
অভিযুক্ত রাজা ফকির হযরত খানহান (রহ:) মাজারের দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে বাবু ফকিরের ছেলে। সেখানে পাশাপাশি বাবু ও তাঁর আরো দুই ভাইয়ের বাসা। ঘটনার বিষয়ে জানতে শনিবার দুপুরে রাজাদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পাশেই তাঁরা চাচা মোস্তফা ফকিরের বাড়ি। সেই বাড়িও ছিল দরজা বন্ধ। পরিচয় জানিয়ে অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর ভেতর থেকে নারী কন্ঠে জানানো হয়, ‘বাড়ির কোন পুরুষ লোক নেই। রাজার মাকে পুলিশ নিয়ে গেছে। আমরা কোন বিষয়ে কথা বলবো না।’
সেখানে স্থানীয় অন্তত ৭ জন নারী-পুরুষের সাথে কথা হয়। তবে তাঁরা পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। বলেন, ‘শুনছি রাজাকে দুই দিন আগে সিংড়ার ছেলেরা মাজারে বসে মারছিল। সেদিন নাকি একটা মেয়ের সামনে রাজার নাম ধরে ডাকা নিয়ে ওই তালিমের সাথে ওর গাঞ্জাম হইল। আর তার পর তো শুনতিছি এই ঘটনা।’
নিহত তালিম মল্লিক ছাত্রলীগ কর্মী ছিল জানিয়ে বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিয়ান আল সুলতান ওশান বলেন, সে ছাত্রলীগের সব ধরনের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতেন।
খবর শুনে রাতে হাসপাতালে ছুটে আসা সমবয়সী স্থানীয় কয়েক কিশোর দাবি করেন, নিহত তালিম ও অভিযুক্ত রাজা কিছু দিন আগেও বন্ধুর মত মিসত। অভিযুক্ত রাজাও ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত।
নিহতের চাচা ইলিয়াস মল্লিক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, তালিমের মা শাহিনূর বেগম গৃহকর্মী হিসেবে বর্তমানে সৌদি আছে। আর বাবা ইলিয়াস মল্লিক পানের ব্যবসা করতেন। তালিমের স্কুল পড়ুয়া একটি ছোট বোন আছে। ভাইয় হত্যার খবর জানার পর থেকে মেয়েটি পাগল প্রায়।
ইয়াছিন মল্লিক বলেন, বন্ধুদের সাথে মাজার এলাকায় ঘুরতে বেরিয়ে ছেলে আমার লাশ হয়ে ফিরলো। আমি এর বিচার চাই। আল্লাহ আপনি এর বিচার করেন।
এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ এরই মধ্যে ওই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে সন্দেহভাজন আরও দুই তরুণকে সনাক্ত করেছে বলে জানা গেছে।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাতাব উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে জানা গছে। ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনার সাথে জড়িতেদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
এসএইচ/এসআই/বিআই/১৯ অক্টোবর, ২০১৯