কাঁকড়া চাষে ভাগ্য বদল মংলার নাছিমা বেগমের, হয়েছেন স্বাবলম্বী।
মাত্র এক বছর আগেও নাছিমা বেগমের ছিল অভাবের সংসারে। অভাব যেন সারাক্ষণ তাকে ঘিরে রাখতো। তার স্বামী আব্দুর রশিদ শেখ যে কয় টাকা আয় করতো সেই টাকা দিয়ে তার সংসার চলতো টানাটানি করে। কিন্তু কাঁকড়া চাষ করে তিনি সফলতা পেয়েছেন, হয়েছেন স্বাবলম্বী।
তার সফল্যে অনেকেই এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে কাঁকড়া চাষে।
নাছিমার স্বামী আব্দুর রশিদ শেখ জানান, বড় মেয়ে ময়না এখন ৩য় শ্রেণীতে লেখাপড়া করে, ১৩ মাসের ছেলে রাব্বি জন্য দুধ কিনতে পারছে। তাদের সংসার ভালোই চলছে।
হাসোজ্জ্যল মুখে নাছিমা বেগমও জানালেন, সরকারের “একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প” এর অধীনে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে গাববুনিয়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য হিসাবে যোগ দেন। এরপর ২০১২ সালের জুন মাসে তিনি জানতে পারেন সরকার তাদের সহজ ও সামান্য সুদে ঋণ দিবে। প্রকল্প থেকে ২০১২ সালের জুলাইয়ে নাছিমা বেগম ঋণ নেয় ১০ হাজার টাকা এবং তার এক আত্বীয়ের কাছ থেকে আরও ঋণ নেয় ১০ হাজার টাকা । মোট ২০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন কাঁকড়া চাষ। কাঁকড়ার জন্য খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয় শামুক ও গুড়া মাছ। মাত্র ২০-২৫ দিনেই বিক্রির উপযুক্ত হয় কাঁকড়া।
তিনি আরও জানান, নিয়মিত সঞ্চয় এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন তিনি। ঋণের কিস্তি শোধ হলে পুনরায় আবার বেশী করে টাকা ঋণ নেবেন।
নাছিমাকে দেখে চিলা ইউনিয়নের গাববুনিয়া এলাকার অনেক সদস্যই এখন কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। নাছিমার ঘেরে এখন অনেকেই পুঁজি বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মো. সেলিম জানান, ”মংলাসহ উপকূলীয় এলাকার কাঁকড়া অনেক বেশি সু-স্বাদু, তাই এ এলাকার কাঁকড়ার চাহিদাও বেশী। তাছাড়া অনেক দেশে কাঁকড়া রফতানি হচ্ছে বর্তমানে। বিশেষ করে থাইল্যান্ডে বেশি রফতানি হয়। এজন্য তার দফতর ২ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল এসব সমিতিভুক্ত কাঁকড়া চাষী সদস্যদের”।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আবদুস সোবহান আমাদের জানান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে সম্পদ সহয়তা হিসাবে ১শ জন সদস্যকে একশটি গরু, ৪৪ জন সদস্যকে ঘর তৈরির টিন, ৯০ জন সদস্যকে শাক-সবজির বীজ, ১২০ জন সদস্যকে গাছের চারা বিতরণ করা হয়। এছাড়াও মাছ চাষ, কাঁকড়া চাষ, হাঁস-মুরগী ও গবাদী পশু পালন এবং নার্সারী খাতে ১ হাজার ১১ জন সদস্যকে প্রায় ৮৯ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশবিদ ড. মিজানুর রহমান বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটির সদস্যদের বিভিন্ন পেশায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে, তিনি পরিবেশের স্বার্থে কাঁকড়া চাষ লবন পানিতে না করে মিষ্টি পানিতে করতে চাষীদের পরামর্শ দিয়েছেন।