নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পূর্ব বিরোধের জেরে হামলায় আব্দুস সালাম সরদার (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন নিহতের বড় ভাইসহ অন্তত ৯ জন।
বুধবার (৩১ জুলাই) ভোরে তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দিনগত রাত ৩টার দিকে মোরেলগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ছোট কুমারখালী গ্রামে হামলার ওই ঘটনা ঘটে। সেই সময় ৪টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার বলছে, নিহত আব্দুস সালাম ও তার পরিবারের ৬ সদস্য ২০০১ সালে স্থানীয় এনায়েত শিকদার হত্যা মামলার স্বাক্ষী। হামলায় অভিযুক্তরা ওই হত্যা মামলার আসমী।
নিহত আব্দুস সালাম সরদার ছোট কুমারখালী গ্রামের প্রয়াত এরফান সরদারের ছেলে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে নিহত সালামের মরদেহ দাফনের জন্য বাড়িতে আনা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে ৯ জন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তারা হলেন- নিহত আব্দুস সালামের বড় ভাই লোকমান সরদার, তাঁর স্ত্রী মালা বেগম, মোজাম সরদার, ইসমাইল সরদার, তাঁর স্ত্রী রেক্সোনা বেগম, ছেলে শাহিন সরদার, সলেমান সরদারের স্ত্রী মঞ্জু বেগম, ছেলে রাকীব সরদার, শামীম সরদারের স্ত্রী জান্নাতী বেগম।
এদিকে ঘটনার পর বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে এনায়েত শিকদার হত্যা মামলা আসামি কবির মোল্লাসহ অভিযুক্ত দুজনকে পর্শবর্তী পিরোজপুর জেলা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন- কুমারখালী এলাকার প্রয়াত ইউসুফ আলী মোল্লার ছেলে মন্টু মোল্লা (৪৮) ও শওকাত মোল্লার ছেলে জাফর ইসলাম (২০)। তাদের থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নিহত আব্দুস সালাম সরদারের ভাতিজা রাসেল সরদার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, একই গ্রামের কবির মোল্লার সাথে সালাম সরদারদের পরিবারের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জেরে মঙ্গলবার দিনগত রাত তিনটার দিকে কবির মোল্লার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লোহার রড, হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সরদার বাড়িতে এসে প্রথমে দরজা জানালা ভাংচুর চালায়। তাদের হামলার শব্দে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে যায়।
এসময় পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে বাইরে বের হলে সন্ত্রাসীরা তাদের কাছে থাকা লোহার রড, হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এতে এই পরিবারের ১২জন গুরুতর জখম হন।
পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুস সালাম সরদারকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সালামের চাচাতো ভাই সলেমান সরদার দাবি করেন রাতে হামলার সময় তাদের বাড়ি লক্ষ্য করে তারা বেশ কয়েক রাউন্ডগুলিও ছুড়ে।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ আফজাল বলেন, হামলার খবর পেয়ে বুধবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। একই গ্রামের সরদার ও মোল্লা পরিবারের মধ্যে পূর্ব বিরোধের জেরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে দুইপক্ষের মধ্যে মামলা, হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। বছর ৩ আগে কবির মোল্লার বড় ভাই মোন্তাজ মোল্লাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ আছে সরদার বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।
মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হামলার সাথে জড়িত মন্টু মোল্লা ও জাফর ইসলাম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জড়িত বাকিদেরও ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।
ওসি আরও বলেন, ওই এলাকার মোল্লা পরিবার ও সরদার পরিবারের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ ছিল। এরআগে ২০০১ সালে মোল্লা পরিবারের সাথে বিরোধে স্থানীয় শিকদার পরিবারের একজন খুন হয়। ওই হত্যা মামলায় সরদার পরিবারের কয়েকজন স্বক্ষী ছিল।
পুলিশের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বংশীয় দ্বন্দ জেরে এবং স্থানীয় বিরোধে এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এজি//এসআই/বিআই/৩১ জুলাই, ২০১৯