স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা।
সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকালে বোধনের মাধ্যমে শুরু হয় পূজার কার্যক্রম। এদিনে বোধন হলেও পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে মঙ্গলবার সপ্তমীর দিন থেকে। শুক্রবার বিজয়া দশমী পর্যন্ত ঢাকের বাদ্যে মুখরিত থাকবে পূজা মণ্ডপগুলো।
দূর্গাপূজাকে ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ। এ বছর বাগেরহাট জেলায় মোট ৬২২টি পূজা মণ্ডপ হচ্ছে দূর্গাপূজা। এই মধ্যে মণ্ডপগুলোতে ভিড় করতে শুরু করেছেন ভক্ত-দর্শনার্থীরা। বেশি সংখ্যক প্রতিমা নিয়ে থাকা মণ্ডপগুলোতে ভিড় সবচেয়ে বেশি।
বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ি। গত আট বছর ধরে জেলায় তথা দেশের অন্যতম বৃহৎ পুজার আয়োজন হচ্ছে এখানে। আয়োজকদের দাবি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা হচ্ছে এখানে।
এই আয়োজনের কারণে বাগেরহাটের এ গ্রামটি এখন সবার কাছে সুপরিচিত। আট বছর আগে হাকিমপুর গ্রামের ব্যবসায়ী লিটন শিকদার দূর্গাপূজা উপলক্ষে বাড়িতে প্রথমবার ১৫১টি প্রতিমা তৈরি করে মণ্ডপ তৈরি করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সাড়া ফেলে দেন।
তারপর থেকে প্রতি বছরই এই মন্ডপে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ বছর ধর্মগ্রস্থ রামায়ণ,পুরাণ ও মহাভারতের নানা দেবদেবীর কাহিনী অবলম্বনে ৭০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে এই মণ্ডপে।
দূর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে থেকেই ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছে এই মণ্ডপে।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার অমিতাভ বাড়ৈ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, রামায়ণ ও মহাভারতে কল্পকাহিনীগুলো এখানে প্রতিমার মাধ্যমে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। ধর্মের অনেক অজানা কাহিনী জানতে পারছি। আমরা সত্যি অভিভূত। ভিড় এড়াতে তাই পূজা শুরুর আগেই শিকদারবাড়ির আয়োজন দেখতে এসেছি।
ভারতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূজা দেখতে আসা দর্শনার্থী পূর্ণচন্দ্র মাইতি ও উজ্জ্বল মন্ডল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন,
আগে জানতাম কোলকাতায় দূর্গাপুজায় বড় আয়োজন হয়ে থাকে কিন্তু বাংলাদেশের আয়োজন দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি।
আমাদের একটা ভুল ধারনা ছিল যে বাংলাদেশে দূর্গাপুজা সেভাবে হয়না। আমাদের সেই ধারনা আজ পাল্টে গেল এই মন্ডপ দেখে। এখানে যে এতো বড় করে দূর্গাপুজার আয়োজন হয় জানতাম না। সত্যিই আমরা মুগ্ধ হয়েছি।
আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার এই প্রতিবেদককে ইনফোডটকম কে বলেন, নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরে আমার জন্ম। অজ পাড়াগাঁতে বেড়ে ওঠা। আমার বাবা ছিলেন গ্রাম্য শৈল্য চিকিৎসক। জীবিকার তাগিদে আমি এক সময়ে বিদেশে পাড়ি জমাই।
ইচ্ছাছিল আমি যদি কখনো টাকা রোজগার করতে পারি তাহলে আমার জন্মভূমিতে বছরে একবার বড় ধর্মীয় উৎসব করব। ঈশ্বর আমাকে বৈমূখ করেননি।
২০১০ সালে প্রথমে এখানে পূজা আয়োজন শুরু করি। সেই থেকে দূর্গাপূজা আসলে এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা তা দর্শন করতে আসেন।
তিনি আরও বলেন, এখানে আসা দর্শনার্থীদের পরিদর্শনে বইয়ে দেয়া মতামতের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিবছর আমরা মন্ডপে প্রতিমার সংখ্যা বাড়াচ্ছি। এ বছর ৭০১টি দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিকাল মিলিয়ে সনাতন ধর্মে লাখো দেবতা রয়েছেন। সনাতন ধর্মের ব্যাপকতা কত তা সবার কাছে তুলে ধরতে আমার এই আয়োজন।
এই মণ্ডপের প্রধান মৃৎশিল্পী বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় ইনফোডটকম কে বলেন, গত বৈশাখ মাস থেকে ১৫ জন মৃৎশিল্পীদের নিয়ে এই মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করি। প্রতিমার রংতুলির সঠিক সময়ে কাজ শেষ হয়েছে।সোমবার বোধনের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দূর্গাপুজা আরম্ভ হয়েছে। সনাতন ধর্মকে এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই মূখ্য উদ্দেশ্যে। দেশের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রতিমার দূর্গাপুজা বলে দাবি করেন ওই শিল্পী।
বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি অম্বরিশ রায় ইনফোডটকম কে বলেন, এক যুগ আগে থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাগেরহাটে শারদীয় দূর্গাপূজাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বেশি প্রতিমা তৈরির প্রতিযোগিতায় নামেন।
শুরু হয় বেতাগার মোমতলা সার্বজনীন মন্ডপ দিয়ে। এরপর থেমে থাকেনি চুলকাঠি, কাড়াপাড়াসহ বিভিন্ন মন্ডপও। তারই ধারাবাহিকতা গত আট বছর ধরে অজ পাড়াগাঁর ব্যবসায়ি লিটন শিকদার তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শারদীয় দূর্গাপুজা মহাধূমধামে করে চলেছেন।এটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় পুজা বলে ধারনা করা হয়।
দূর্গাপূজা আসলে বাগেরহাট হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন। সব ধর্মের মানুষ শারদীয় দূর্গোৎসবে আনন্দে মেতে উঠুক সেই প্রত্যাশা ওই নেতার।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় ইনফোডটকম কে বলেন, বাগেরহাট জেলায় এবছর ৬২২টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা নির্বিঘœ করতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেয়া হবে।
দেশের সবচেয়ে বড় দূর্গাপূজা হচ্ছে হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে। এখানে দেড় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন থাকছে বলে জানালেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এইচ//এসআই/বিআই/১৫ অক্টোবর, ২০১৮