স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনার চারদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে নিহত যুবলীগের সাবেক নেতা শেখ শুকুরের বড় ভাই দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা এবং পুলিশ বাদী হয়ে একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করেন।
দুটি মামলারই প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ফকির। মামলা দায়েরের আগেই ১ অক্টোবরের ওই হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ শহীদুল ফকিরসহ সন্দেহভাজন ১২ জনকে আটক করে। উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশী তিনটি অস্ত্র ও গুলি। ঘটনার পাঁচদিন পরেও এই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।
মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শহীদুল ফকিরের লাইসেন্স করা একটি শর্টগানসহ তিনটি আগ্নেঅস্ত্র, গুলিসহ হত্যায় ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করে।
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ঠাকুর দাস মন্ডল বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুলকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যাদের সবাইকেই এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে নিহত শুকুরের ভাইয়ের দায়ের করা হত্যা মামলায় শহীদুল ফকিরকে প্রধান করে ৩১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, গত সোমবার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদার, সাবেক যুবলীগ নেতা ও জেলা আওয়ামী তরুণলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ শুকুর ও দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন তাঁতী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক বাবলু শেখকে শহীদুল ফকিরের লোকজন অস্ত্রের মুখে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে নিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এতে ঘটনাস্থলেই শুকুর মারা যান। আর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনসার আলী দিহিদারের মৃত্যু হয়।
।। দলীয় বিরোধেই খুন হন ২ আ.লীগ নেতা, গুলি করা হয় প্রকাশ্যে
হত্যা মামলার বাদি শেখ ফারুক বলেন, পর পর দুই বারের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকির ইউনিয়ন পরিষদটি স্থানীয়দের নির্যাতনের জন্য টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত করতেন। ঘটনার দিন আনসার আলী দিহিদার, আমার ভাই শুকুর ও বাবলুকে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে নিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে মারাত্মকভাবে আহত করে। পরিকল্পিত ভাবে হত্যারে ঘটনা ভিন্ন ভাবে তুলে ধরতে মারধরের পর তাদের বোরকা পরিয়ে মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ায় শহীদুল ফকির ও তার সশস্র সন্ত্রাসী বাহিনী।
ওসি বলেন, ঘটনার পর পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুলসহ মোট ১২ জনকে আটক করে। তাদের ৫৪ ধারায় (আমলযোগ্য অপরাধে জড়িত সন্দেহে) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই ১২ জনের মধ্যে ৭ জন এই দুই মামলার এজাহার নামীয় আসমী। তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আটক অন্যদের বিষয়েও তদন্ত চলছে। এ মামলার বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
এদিকে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, ইউনিয়নের মিত্রডাঙা এলাকায় সাবেক যুবলীগ নেতা শেখ শুকুরের একটি মৎস্য ঘের দখল করে নিয়েছিল চেয়ারম্যান শহিদুল ফকির। পরবর্তিকে আনসার আলী দিহিদারের সহযোগীতায় ওই মৎস্য ঘেরটি চেয়ারম্যানের কবজা থেকে পুন:উদ্ধার করেন শুকুর। তাদের সাম্প্রতিক দন্দ্বের শুরু এখন থেকে।
।। জানাযায় এমপিকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ
ওসি বলেন, মামলার বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত করেছে। সব দিক বিবেচনার তদন্ত করছে পুলিশ। ওই ঘটনার সাথে কারা কারা জড়িত ছিল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস কি, কোথা থেকে এই অস্ত্র আনা হলো, এর পেছনে কেউ ইন্ধনদাতা আছে কিনা এ সব বিষয় খুঁতে পুলিশ অনুসন্ধান করছে। এসব বিষয়ে আসামিদের ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিগ্রহী আদালতে রিমান্ড চাওয়া হবে।
নিহত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী দিহিদারের (৫৩) বাড়ি দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের দৈবজ্ঞহাটি গ্রামে। আর সাবেগ যুবলীগ নেতা শেখ শুকুরের বাড়ি জোকা গ্রামে।
প্রসঙ্গত গত সোমবার দুই দফায় দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদ ও সংলগ্ন সেলিমাবাদ ডিগ্রি কলেজ মাঠ এবং আনসার আলী দিহিদারের বাড়িতে হামলা করে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে দুই আওয়ামী লীগ নেতা খুন করা হয়। ওই ঘটনায় নিহত আনসার আলীর স্ত্রী মঞ্জু বেগম ও আহত জোকা গ্রামের ইউনিয়ন তাঁতি লীগের শ্রম উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বাবলু শেখ ঢাকা ও খুলনার দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এইচ//এসআই/বিআই/০৫ অক্টোবর, ২০১৮
** দলীয় কোন্দল: হামলায় দুই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু