স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে হামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অন্তত দুইজন।
সোমবার (১ অক্টোবর) বিকেলে মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। হতাহতরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।
নিহতরা হলেন- দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী দিহিদার (৫৩) ও ইউনিয়নের জোকা গ্রামের মোসলেম শেখের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী শুকুর আলী শেখ (৪২)।
আহতরা হলেন- দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন তাঁতী লীগের শ্রমউন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বাবলু শেখ (২৫) ও ইউনিয়নের আলতিবুরুজবুনিয়া গ্রামের প্রয়াত লতিফ খানের ছেলে মিলটন খান (৩৬)।
হতাহতদের উদ্ধার করে প্রথমে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনা হয়। সেখান থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় আনসার আলী ও বাবলু শেখকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা আনসারে মৃত্যু হয়।
নিহত আওয়ামী লীগ কর্মী শুকুর আলীকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘটনার পর ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে দৈবজ্ঞহাটি বাজারের সকল দোকানপাট।
সন্ধ্যার কিছু আগে পুলিশ ঘটনার সাথে সন্দেহে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. শহীদুল ইসলাম ফকিরসহ দুজনকে আটক করেছে।
আহত ব্যক্তি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আহত মিলটন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলামের ভাগ্নে এবং শহীদুল চেয়ারম্যান গ্রুপের লোক বলে পরিচিত। হতাহত অপর তিনজন আনসার আলী দিহিদার গ্রুপের।
স্থানীয়রা বলছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সমর্থক এবং চেয়ারম্যান শহীদুল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ ডা. মোজাম্মেল হোসেনের সমর্থক বলে পরিচিত।
নিহত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলীর স্ত্রী মঞ্জু বেগমের দাবি, ‘বেলা ৩টার দিকে শহীদুল চেয়ারম্যানের লোকেরা তার স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তারা হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুর ও তছনছ করে। এসময় বাধা দিতে গেলে তাকেও পিটিয়ে পা ভেঙে দেয় শহীদুল চেয়ারম্যানের লোকজন।’
ওই ঘটনার পর আনসার আলীকে ধরে নিয়ে আসার সময় তার বাড়ির অদূরে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার বিকেল ৫টার কিছু আগে দৈবজ্ঞহাটি থেকে পুলিশের গাড়িতে করে তিনজনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে হাসপাতালে আনার আগেই একজনের মৃত্যু হয়।
অপর দুজন আওয়ামী লীগ নেতা আনসার আলী ও বাবলুকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনা নিহত শুকুর ও আহত বাবলুর শরীরে বোরকা পরানো ছিল। হাসপাতালে ইউনিয়ন তাঁতী লীগের শ্রমউন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বাবলু শেখ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুলের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। সেই জেরে সোমবার বিকালে চেয়ারম্যানের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা বাজার থেকে তাদের জোর করে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে নিয়ে যায়।
‘সেখানে নিয়ে আমাদের সবাইকে বোরকা পরায় এবং মারধর করে। পরে আমাদের সবাইকে পরিষদ থেকে বাইরে নিয়ে এসে চেয়ারম্যান শহীদুল চিৎকার করে বলতে থাকে আমরা তাকে হত্যা করতে এসেছি। এসময় তার লোকজন ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়, গুলি করে।’
নিহত শুকুর শেখের পেটের ডান পাশে গুলি লাগার আকৃতির দুটি ছিদ্র দেখেছেন এই প্রতিবেদক। তবে গুলিবিদ্ধ হবার বিষয়টি কোন চিকিৎসক নিশ্চিত করেননি। হাসপাতালের একজন চিকিৎসককে পেটে নাভির ডান পাশে ওই চিহ্নি দেখিয়ে গুলি কী না, জানতে চাইলে গুলি লাগার মতোই মনে হচ্ছে বলে বলেন তিনি। তবে ময়নাতদন্তের আগে এ বিষয়ে পরিস্কার কিছু বলা যাবেনা বলেও দাবি করেন ওই চিকিৎসক।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনা হয় অপর আহত লিটন খানকে। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের পোচের আঘাত ছিল।
আহত লিটন সাংবাদিকদের বলেন, আমি শহীদুল চেয়ারম্যানের ভাগ্নে। সোমবার বিকেলে চেয়ারম্যান দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের বসে ছিলেন। এসময় বোরকা পরিহিত তিন-চারজন তার কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ারম্যানকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করতে চেষ্টা করে। এসময় চেয়ারম্যানের সমর্থকরা ছুটে এসে তাদের ধরে ফেলে। চেয়ারম্যানও আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালায়। পরে স্থানীয়রা তাদের ধরে গনপিটুনী দেয়।
আমি চেয়ারম্যানের উপর হামলা ঠেকাতে গিয়ে আহত হই।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক (ইএমও) শেখ রিয়াদুজ্জামান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ঘটনার পর মোট চারজনকে হাপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের একাধিক কোপ ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আহতদের শরীরেরও আঘাতসহ একাধীক কোপের চিহ্ন রয়েছে।
অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আহত সবাইকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, ঘটনার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। পুলিশ ঘটনা সত্যতা উদঘাটনের চেষ্টা করছে।
বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পর চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির ও পরিষদের এক চৌকিদারকে আটক করেছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে চেয়ারম্যানের লাইসেন্সকৃত শার্টার গান ও গুলি।
এইচ/এজি//এসআই/বিআই/০১ অক্টোবর, ২০১৮/আপডেট