স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দুই প্রসূতি এবং এক স্বজনকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট আবুল কালাম আজাদ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী দেখতে গিয়ে ওই কাণ্ড ঘটান বলে অভিযোগ রোগী ও তার স্বজনদের।
অভিযোগ, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চমালা গ্রামের জাহিদুল বাবুর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৮), গাজীরঘাট গ্রামের আলম শেখের স্ত্রী রোজিনা বেগম (২০) এবং তার মা নাছিমা বেগম (৪৫) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মারধরের শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের দেখতে যান ওই ডাক্তার। এ সময় তিনি প্রথমে এক প্রসূতির মা এবং পরে ওই প্রসূতিসহ দুই রোগীকে থাপ্পড় দেন। ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগী ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়।
ক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান রোগীর স্বজনেরা। পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন অরুণ চন্দ্র মন্ডল সেখানে গিয়ে দু:খ প্রকাশ করেন এবং ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এক রোগীর মা নাছিমা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘রোববার ভোরে বাড়ি থেকে আমার সন্তানসম্ভবা মেয়ে রোজিনাকে নিয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আসি। তখন চিকিৎসক আমার মেয়েকে দেখে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করে নেন।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাইনি বিভাগের চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ আসেন নিয়মিত রাউন্ড দিতে। তখন তার মেয়ের প্রসব বেদনা শুরু হয়। সে সময় মেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছিলেন বলে নাছিমা জানান।
নাছিমা বলেন, ‘এ সময় ডাক্তার এসে আমাকে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যেতে বললে আমার একটু দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আমাকে দুটি চড় মারেন। আমি চড় খেয়ে ঘুরে পড়ে যাই। পরে তিনি আমার সন্তানসম্ভবা মেয়েকেও মাথায় চড় মারেন।’
রোজিনা বেগম বলেন, ‘সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের হাতে মার খেলাম। এর থেকে কষ্টের আর কি আছে?’
ওই ওয়ার্ডের আরেক রোগী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘রোজিনাকে মারধর করে চিকিৎসক আমার বেডে এসে বলেন, “এই তোর তো গতকাল যাওয়ার কথা, তুই যাসনি কেন?” এটা বলেই আমার মাথায় চড় দেয়।’
গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অন্য আরেক রোগী মাহিনুর বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘সকালে ডাক্তারা যখন রাউন্ডে (রোগীদের দেখতে আসেন) আসেন তখন রোগীর কোন স্বজনদের রোগীর কাছে না থাকতে বলা হয়। তবে ডাক্তার এভাবে রোগীকে মারধর করে তা আগে কখনও শুনিনি বা দেখিনি। সকালে এ ডাক্তার মারলেন। এরআগে গত শনিবার রাতে আলট্রাসনোগ্রাম করার সময় ওই ডাক্তার আমার সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন।’
এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গাইনি বিভাগে একজন নারী চিকিৎসক দিলে ভালো হয় বলে মনে করেন ওই নারী।
হাসপাতাল কর্তিপক্ষ বলছে, রোগীদের কাছে স্বজনদের অতিরিক্ত চাপ থাকে। এতে চিকিৎসার পরিবেশ ব্যহত হয়। তাই সব সময় তারা রোগীর কাছে বেশি স্বজন না থাকতে অনুরোধ করেন।
তবে প্রসূতি নারীর থাপ্পড় দেওয়া ওই ঘটনা দুঃখ বলছেন তারাও।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন অরুণ চন্দ্র মণ্ডল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি হাসপাতালেই ছিলাম। খবর পেয়ে গাইনী বিভাগে গিয়ে রোগী ও স্বজনদের জবানবন্দি নিয়েছি। এসময় রোগীদের গায়ে হাত তোলার ঘটনার সত্যতা পেয়েছি।’
‘ওই চিকিৎসকের এ ধরণের আচরণ কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমি এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’
তিনি কেন রোগী ও তার স্বজনের গায়ে হাত তুলেছেন তা জানাতে কারণ দর্শাতে নোটিশ দিয়েছে সিভিল সার্জন। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তা লিখিতভাবে ওই নোটিশের জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ঘটনার পর পরই হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া ওই চিকিৎসকের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডা. আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এজি//এসআই/বিআই/০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮