স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের চিতলমারীতে নিখোঁজের এক সপ্তাহ পরে এক কলেজ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৯ আগস্ট) দুপুরে চিতলমারী উপজেলা সদরের এস এম মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ডোবা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ওই কলেজ ছাত্রের নাম সবুজ বিশ্বাস (১৭)। তিনি উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের শিবপুর-কাটাখালী গ্রামের পরিতোস বিশ্বাসের ছেলে। সবুজ চিতলমারীর শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট শাখার একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ দুই কিশোরকে আটক করেছে। এরা হলেন- চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের আড়ুয়াবর্ণী গ্রামের আবদুর সালাম খানের ছেলে সাব্বির খান (১৭) ও একই গ্রামের মো. হাসমত খানের ছেলে লিমন খান (১৭)। তারা চিতলমারী এস এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়তো।
এদের মধ্যে সাব্বির ৯ম শ্রেণিতে এবং লিমন ১০ শ্রেণিতে পড়তো। দুজনই নিহত সবুজের বন্ধু বলে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। কিছুদিন আগে মেয়ে ঘটিত একটি বিষয় নিয়ে সাব্বির ও লিমনসহ ১১ জনকে বহিস্কার করেছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ বলছে, পূর্ব বিরোধের জের ধরে সবুজকে হত্যার পর মরদেহ গুম করতে কাঁথা দিয়ে পেচিয়ে কচুরিপানায় ঢাকা ওই ডোবায় ফেলে দেয় সাব্বির ও লিমন।
নিহতের বাবা পরিতোস বিশ্বাস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, গত ১৩ আগস্ট বিকেলে সবুজ তার মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর সে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁছি করেও কোথাও তার সন্ধান না পেয়ে পরদিন ১৪ আগস্ট চিতলমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন তিনি।
পুলিশ সূত্র বলছে, পরিবারের জিডির তদন্ত করতে গিয়ে শনিবার রাতে গোপালগঞ্জ জেলা শহরের মোহাম্মদ পাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে সবুজের দুই বন্ধু সাব্বির ও লিমনকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে সবুজের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।
পরে আটক ওই দুই কিশোরের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, শনিবার দুপুরে এস এম মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডোবা থেকে সবুজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের মা পুরবী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
স্থানীয়রা বলছেন, নিহত সবুজ এবং তারা কয়েকজন বন্ধু কিছুটা উশৃঙ্খল ভাবে চলাফেরা করতো। আটক সাব্বির ও লিমন এলাকায় সবুজের সাথে এক সাথে ঘুরতো। গত ১৩ আগস্ট বিকালেও তাদের এক সাথে মোটরসাইকেলে ঘুরতে দেখা যায়।
চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অনুকুল চন্দ্র সরকার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আটক সাব্বির ও লিমন নিহত সবুজের বন্ধু। তারা এক সাথেই ঘোরা ফেরা করতো। গত ১৩ আগস্ট সবুজ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তার ওই দুই বন্ধু এলাকায় ছিলনা।
‘১৪ আগস্ট সবুজ বিশ্বাসের বাবা থানায় জিডি করার পর থেকে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এরই একপর্যায়ে মুঠোফোনে কল ট্রাকিং এর মাধ্যমে শনিবার রাতে গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে নিহতের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলসহ সাব্বির ও লিমনকে আটক করা হয়। পরে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা সবুজকে হত্যার কথা স্বীকার করে।’
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় ১৩ আগস্ট বিকেলেই সবুজকে হত্যা করা হয়।
‘আটক দুজন জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে বলেছে, ঘটনার দিন ১৩ আগস্ট বিকেলে সাব্বির ও লিমন সবুজের মোটরসাইকেলে করে এস এম মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন লাল্টু বিশ্বাসে কোচিং সেন্টারের পেছনে একটি পরিত্যাক্ত ঘরে আড্ডা দিচ্ছিল। এর একপর্যায়ে সাব্বির ও লিমন হাতুড়ি দিয়ে সবুজের মাথায় আঘাত করে। এতে সবুজ অচেতন হলে পড়ে। পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে গলায় ফাঁস দেয় তারা।’
ওসি আনুকুল সরকার বলেন, প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে লিমনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিল সবুজের। ওই ঘটনায় লিমনের হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে পোচ দিয়েছিল সবুজ। এর জের ধরে সবুজকে হত্যার পর লাশ গুম করতে মরদেহে কাঁথা পেচিয়ে কচুরিপানায় ঢাকা ডোবায় ফেলে দেয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা রোববার বিকালে চিতলমারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে লিমন, সাব্বিরসহ কেয়েকজন লাল্টুর কোচিংয়ের পিছনে একটি মেয়ের সাথে গল্প করছিল। সবুজ দেখে ফেলে এসএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানায়। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষকরা লিমন ও সাব্বিরসহ ১২ জনকে বহিস্কার করে।
‘আটক দুই কিশোর পুলিশে বলেছে, লিমনকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার জেরে সবুককে হত্যা করে তারা। তবে আমরা সব দিক বিবেচনায় তদন্ত করছি। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ এবং এর সাথে আরও কেউ জড়িত কি না তা উদঘাটনে তদন্ত চলছে।’
এইচ//এসআই/বিআই/১৯ আগস্ট ২০১৮/আপডেট