স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
• পিপিপির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার
• চার বছরের মধ্যে বিমানবন্দর নির্মাণের প্রত্যাশা
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় খানজাহান আলী বিমানবন্দরের জন্য নতুন করে অধিগ্রহণকৃত ৫২৯ একর জমি সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের (সিএএবি) কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে উপজেলায় ফয়লা এলাকায় নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দর এলাকায় এক অনুষ্ঠানে সিএএবি’র কাছে অধিগ্রহণকৃত জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়। এ সময় অধিগ্রহণকৃত জমির ২০ জন মালিককে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা এ বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে। শুধু রামপাল-বাগেরহাটবাসীর নয়, খুলনা অঞ্চলের বিমানবন্দর হবে এটি। খানজাহান আলী বিমান বন্দর প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। পিপিপির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সরকার চেষ্টা করছে। তা না হলে পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নেই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হবে।
এ সময় তিনি অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেকোন ধরণের অনিয়োম রোধে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান। বলেন, ‘কথাটি অপ্রিয় হলেও এলএ শাখার কিছু লোকের বিরদ্ধে অনিয়মের কানাঘোষা শোনা যায়। আমার একটাই কথা, কোথাও যেন কেউ টাকা-পয়সা আনতে গিয়ে কোন ধরণের জটিলতায় না পড়ে।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাগেরহাট-৩ আসনের সাংসদ হাবিবুর নাহার, সিএএবি’র সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মো. হেমায়েত হোসেন, পরিচালক (প্রশাসক) মো. সাইফুল ইসলাম, সিএএবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শহীদুল আফরোজ, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শাহীন হোসেন।
খানজাহান আলী বিমান বন্দরনির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শহীদুল আফরোজ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ১৯৯৬ সালে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি শুরু হয়। তখন একটি শর্ট টেক অফ ল্যান্ডিং বন্দর (STO L) হিসেবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় ৯৯ একর জমি অধিগ্রহন করা হয় এবং মাটি ভরাটের কিছু কাজ হয়।
তবে পরবর্তিতে দীর্ঘ সময় এই বিমান বন্দর নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। শর্ট টেক অফ ল্যান্ডিং এর ছোট বিমানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তিতে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। সে জন্য আরও ৫২৯ একর জমির দরকার ছিল। যা আজ আমরা পেয়ে গেলাম। এখন আমাদের মোট ৬৩০ একরের মতো জায়গা পেয়েছি।
শহীদুল আফরোজ বলেন, ‘বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ইতমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা নকশা তৈরি করছেন। বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য আমরা ফরেন ডোনার খুঁজতেছি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথেও এ বিষয়ে কথা হচ্ছে। পিপিপির আওতায় ফরেন ডোনার মাধ্যমে না হলে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি বছরেই বিমানবন্দরের জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হবে। আশা করছি চার বছরের মধ্যে বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, খুলনা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার খুলনা-মংলা মহাসড়কের পাশে ফয়লায় এলাকায় বিমান বন্দরটির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। প্রথমে এর জন্য ৪১ দশমিক ৩০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কিছু মাটি ভরাট কাজের পর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দরে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (কুয়েট) সম্ভাব্যতা যাচাই করার দায়িত্ব দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর কুয়েটের বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
বিমানবন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
এইচ//এসআই/বিআই/১৭ আগস্ট ২০১৮