স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
ভুয়া নিবন্ধন সনদে শিক্ষকতা করা বাগেরহাট সদরের দশানী যদুনাথ মডেল স্কুল এন্ড কলেজে দুই শিক্ষকের বেতন-ভাতা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অপর আরেক শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১ আগস্ট) বিকেলে প্রতিষ্ঠান প্রধান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পৃথক চিঠি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
‘তিন শিক্ষকের সনদই ভুয়া, তবু তুলছেন বেতন-ভাতা’ শিরোনামে ৩০ জুলাই বাগেরহাট ইনফো ডটকমে স্কুলটির ওই অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানটির তিন জন শিক্ষক ভুয়া নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) তদন্ত করে তিন শিক্ষকের সদন জাল এমন প্রমান পেয়ে প্রায় এক বছর আগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা না নিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা পেতে সহায়তা করে আসছেন।
সংবাদ প্রকাশের পর বুধবার অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে চিঠি পাঠান প্রতিষ্ঠান প্রধান। সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার শিক্ষা) ডেইজী রানী বিশ্বাস ও ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) গৌতম কুমার হালদারকে পাঠনো ওই চিঠিতে নিবন্ধন সনদ সম্পর্কিত এনটিআরসিএ’র ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত স্মারণ নম্বর উল্লেখ করে বলা হলেছে, ‘২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তারিখে সভার সিদ্ধান্তের আলোকে আপনার বেতন-ভাতা জুলাই/২০১৮ তারিখ থেকে পুনরায় স্থগিত করা হলো। আগামী নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির সভায় ভুয়া সনদপত্র প্রদর্শন পূর্বক চাকুরী করার অপরাধে আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এছাড়া অভিযুক্ত অপর খণ্ডকালীন শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) শিমুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যহতির সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
যদুনাথ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের পেশাজীবি সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অজয় কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি হজ্ব মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য দেশের বাইরে আছেন। এখন দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। সভাপতি দেশে এলে ম্যানেজিং কমিটির সভা করে তাদের বিরুদ্ধে চাকরি থেকে অপসারণসহ আইনানুক অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের মধ্যে দু’জন এমপিও’র বেতন-ভাতা পান। তাদের বেতন-ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া খন্ডকালিক শিক্ষককে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।
ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষক ডেইজী রানী বিশ্বাস মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আমি অসুস্থ্য, ছুটিতে বাড়ি আছি। এখন পর্যন্ত এ ধরণের কোন চিঠি পাইনি।
অপর শিক্ষক গৌতম কুমার হালদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন:
তিন শিক্ষকের সনদই ভুয়া, তবু তুলছেন বেতন-ভাতা
বাগেরহাটে কাঠ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা
ছাত্রলীগ নেতার উপর হামলা: ১১ দিন পর ডাকাতির মামলা
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, গত ৩০ জুলাই সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই ওই তিন শিক্ষক আর স্কুলে আসেন নি। ওই শিক্ষকরা তারা তাদের নিবন্ধন সনদ বৈধ প্রমানের জন্য নানা তদবির শুরু করেছেন। শোনা যাচ্ছে একজন প্রভাবশালীর মাধ্যমে বিষয়টি তদারকির চেষ্টা চালাচ্ছেন ওই শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বা অব্যহতি কোন প্রক্রিয়ার সাথেই আমার যুক্ত নই। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ হয় ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে। অপসারণ বা কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের একতিয়ারও তাদের। আপনাদের সংবাদটি দেখে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ওই অধ্যক্ষকে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।
তবে নিবন্ধন সনদ না থাকার পরও শিক্ষা বিভাগ কিভাবে ওই শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সুপারিস করে এবং তা কার্যকর হয় এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। আর বিদ্যালয় কর্তিপক্ষ নিবন্ধন সনদ ছাড়াও কাউকে খণ্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন বলে জানান।
এইচ//এসআই/বিআই/০১ আগস্ট ২০১৮