ইনজামামুল হক | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
ভুয়া নিবন্ধন সনদে বাগেরহাটের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছেন তিন শিক্ষক। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) তদন্তে ওই শিক্ষকদের সনদ জাল বলে প্রমানিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তিপক্ষ।ভুয়া সনদের মাধ্যমে চাকরি করা ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রায় এক বছর আগে ব্যবস্থা নিতে নিতে বলেছিল এনটিআরসিএ। তবে এই দীর্ঘ সময়েও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া তো হয়নি, বরং অভিযুক্ত ওই শিক্ষকদের সরকারি বেতন-ভাতা উত্তলনে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তিৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
এমন ঘটনা ঘটেছে, বাগেরহাট সদরের দশানী যদুনাথ স্কুল এন্ড কলেজে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অজয় কুমার চক্রবর্ত্তী সরকার সমর্থিত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের পেশাজীবি সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।
নিয়ম অনুয়ায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়জিত শিক্ষকদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। পরীক্ষার মাধ্যমে নিবন্ধনের সনদ প্রদান করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
যদুনাথ স্কুল এন্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সনদ নিয়ে চাকরি করছেন এমন অভিযোগে ২০১৭ সালে শুরুর দিকে তদন্ত শুরু করেন প্রতিষ্ঠানের তৎকালিন সভাপতি বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোমিনুর রশিদ। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান ২০১৭ সালে ৪ জুন এনটিআরসিএ কর্তিৃপক্ষের কাছে প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ যাচাই-বাছাই এর জন্য পাঠান।
ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএ কর্তিৃপক্ষ ‘বেশিনিক/শি.শি/সনদ যাচাই সকল/৭৮২/২০১৭/১৭’ নং স্মারকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধান অজয় কুমার চক্রবর্ত্তীকে সনদ যাচাই তথ্য প্রদান করে। যাতে যদুনাথ স্কুল এন্ড কলেজে ২১ শিক্ষকের মধ্যে ৩ জনের সনদ সঠিক নয় বলে উল্লেখ করা হয়। একই সাথে ওই পত্রে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সনদ নিয়ে শিক্ষাকতার যুক্ত শিক্ষদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এনটিআরসিএ কর্তিৃক সনদের বৈধতা না পাওয়া ওই তিনি শিক্ষক হলেন কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর গৌতম কুমার হালদার, সামাজিক বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষিকা শিমুল আক্তার, কম্পিটার শিক্ষার সহকারী শিক্ষক ডেইজী রানী বিশ্বাস। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানে শিক্ষক রতনা রায়কে নিয়মবহিরভূত ভাবে এমপিও ভুক্ত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে এনটিআরসিএ।
এদের মধ্যে গৌতম হালদার ২০১৩ সালের ১ আগস্ট, শিমুল আক্তার ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর ও ডেইজি রানী ২০০৯ সালের ১ আগস্ট এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা শুরু করেন। তাঁদের দাবি, সবগুলো নিবন্ধন সনদ বৈধ। এনটিআরসিএ ভুুল করেছে।
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট একাধীক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বৈধ নিবন্ধন সনদ না থাকার পরও ওই শিক্ষরা চাররিতে বহল রয়েছেন। এমনকি তারা সরকারি বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে আসছে।
বেতন-ভাতার তোলার জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকে প্রেরিত তালিকা এবং সরকারের মান্থিলি পে অডারেও ওই তিন শিক্ষকদের নাম রয়েছে।
নিজের নিবন্ধন সনদটি বৈধ দাবি করে সহকারী শিক্ষক ডেইজী রানী বিশ্বাস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এনটিআরসিএ থেকে পাঠানো যাচাই বাছাইয়ে প্রতিবেদন সঠিক নয়। আমরা পুন:যাচাইয়ের জন্য আবেদন করেছি। আর বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাথে বসে সমাধান হয়েছে।
এ বিষয়ে জনাতে চাইলে যদুনাথ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ অজয় কুমার চক্রবর্ত্তী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এনটিআরটিএ’র ওই চিঠি পেয়ে আমারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেই। এনিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা তাদের সনদ বৈধ বলে দাবি করলে তা প্রমানের জন্য সুযোগ দেওয়া হয় এবং তাদের বেতন-ভাতা পুনরায় চালু রাখা সিন্ধান্ত হয়। ওই সিন্ধান্ত অনুয়ায়ী তারা এখন চাকরি করছেন।
তবে সনদ বৈধ কী না তা যাচাইয়ের কত দিন সময় দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোন নির্দষ্ট সময়ের কথা উল্লেখ না করে বলেন, পুন: যাচাই-বাছাইয়ের সনদ সঠিক বলে প্রমানিত না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে বলে ওই শিক্ষকদের কাজ থেকে অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
এইচ//এসআই/বিআই/৩০ জুলাই ২০১৮