বাগেরহাটের শরণখোলায় মাঠজুড়ে এখন সূর্যমুখীর হাসি। পরিচর্যার পালা শেষে আর দু-তিন সপ্তাহ পরই এ হাসি আলোকিত করবে কৃষকের ঘর।
ধানসাগর, রায়েন্দা, খোন্তাকাটা, সাউথখালী— উপজেলার চার ইউনিয়নে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে। শুধু শরণখোলায় নয়, উপকূলীয় অঞ্চলের ১৭ জেলার ২৪ উপজেলায় এবার এক হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ হয়েছে; যা থেকে ২ হাজার টন তেল উৎপাদন হবে বলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে এ অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে ফসলটির আবাদ চালু করে ব্র্যাক। কিন্তু কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় এর আবাদ। তবে সিডরের পরে এ অঞ্চলে শস্যের নিবিড়তা বাড়াতে আবাও সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় তারা। এ কার্যক্রমের আওতায় আগামী বছর তাদের আরো চার হাজার হেক্টর জমিতে এর আবাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রামের প্রধান সুধীর চন্দ্র নাথ বলেন, ‘গতবার তেল প্রক্রিয়াকরণ মেশিন না থাকায় কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এবার উন্নত প্রযুক্তির মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রস্তুতকৃত তেল স্বল্প মূল্যে বাজারজাত করা হবে। আমদানিকৃত অন্যান্য তেলের চেয়ে লিটারপ্রতি এর দাম ৫০-৬০ টাকা কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে’।
শরণখোলা উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরণখোলা সহ এ অঞ্চলের মাটি সূর্যমুখী চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ চাষে বীজতলা থেকে শুরু করে সার, কীটনাশক, শ্রমিক মজুরি— সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। ১২০-১৩০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারেন কৃষক। বিঘাপ্রতি ফলন পাওয়া যায় ১০ মণ। প্রতি মণ সূর্যমুখীবীজ থেকে তেল উৎপন্ন হয় ১৬-১৮ কেজি।
স্বল্প সময়ে অধিক লাভ পাওয়ায় তাই ক্রমেই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন উপজেলার কৃষকেরা। ২০১০ সালে যেথানে ৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল সেখানে গত মৌসুমে চাষ হয়েছে ৪০ হেক্টর জমিতে। আর চলতি মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০ হেক্টর।
ব্র্যাকের কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচির শরণখোলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ শাখা ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম মিঞা সূর্যমুখী চাষ সম্পর্কে বলেন, এ বছর তারা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মোট ৩৬২ জন চাষীকে এ কর্মসূচির আওতায় এনেছেন। কৃষকদের প্রত্যেককে একরপ্রতি অফেরতযোগ্য ৭ হাজার করে টাকা ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হয়। বাজারমূল্যে চাষীদের জমির সূর্যমুখী কিনে নেয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে চাইলে চাষীরা ফসল বাইরেও বিক্রি করতে পারবেন।
এ অঞ্চলে প্রথম সূর্যমুখী চাষ শুরু করেন উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামের দুলু তালুকদার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথম বছর আমি এক বিঘা জমিতে চাষ করি। ভালো লাভ পাওয়ায় ফসলটির প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। এ বছর তিন বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি।’
একই গ্রামের মো. শাহজাহান জানান, প্রতিবেশীদের সূর্যমুখী চাষ করতে দেখে তিনি এতে আগ্রহী হন। গত বছর ১০ বিঘা জমিতে চাষ করে তার ১ লাখ টাকা লাভ হয়। এ বছরও সমপরিমাণ জমিতে চাষ করেছেন তিনি।
এ চাষে উৎপাদিত ফসল বিক্রিতেও ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে না কৃষকদের। নোয়াখালী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার তেল ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই ফসল কিনে নিচ্ছেন। মণপ্রতি দাম পাওয়া যায় ১,৮০০ থেকে ১, ৯০০ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার এ বিষয়ে বলেন, প্রতি মণ সূর্যমুখীবীজ বিক্রি করে চাষী ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত পান। তারা যাতে ফসলের ন্যায্যমূল্য পান, কৃষি বিভাগ সেদিকেও নজর রাখছে। তাই শরণখোলায় সূর্যমুখীর চাষ দিন দিন বাড়ছে।