স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
ছয় বছর পর ঘোষিত বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি নিয়ে নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ঘোষিত কমিটিতে পদবঞ্চিত ও সাবেক ছাত্র নেতা বলছেন, এ কমিটি জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম এ সালামের ‘পকেট কমিটি’।
গত মঙ্গলবার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ছয় সদস্যের বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আকরামুল হাসান। পদবঞ্চিতদের দাবি, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময় ওই কমিটি দেওয়া হয়েছে।
নতুন কমিটিতে সভাপতি পদে ইমরান খান সবুজ, জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি পদে মো. গোলাম রসুল তরফদার নেওয়াজ, সাধারণ সম্পাদক পদে আলী সাদ্দাম দ্বীপ, যুগ্ম সম্পাদক পদে দু’জন তালহা মাহী ও শেখ ফয়সাল মোর্শেদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আতিকুর রহমান রাসেলকে রাখা হয়েছে।
এরমধ্যে সদ্য পদ পাওয়া জেলা ছাত্রদলের জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি মো. গোলাম রসুল তরফদার নেওয়াজ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান রাসেল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
ছাত্রদলের নতুন পদ পাওয়া সভাপতি ইমরান খান সবুজ আগের জেলা কমিটিতে সহ-সাধারণ সম্পাদক, জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি মো. গোলাম রসুল তরফদার নেওয়াজ সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক আলী সাদ্দাম দ্বীপ সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক তালহা মাহী সদস্য ও আরেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ ফয়সাল মোর্শেদ কোন কমিটিতেই ছিলেন না। আর সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আতিকুর রহমান রাসেল ছিলেন স্কুল বিষয়ক সম্পাদক।
মঙ্গলবার দুপুরে কমিটি অনুমোদনের পর ওই দিন সন্ধ্যায়ই পদত্যাগের কথা জানিয়ে সংবাদকর্মীদের কাছে ই-মেইলে বার্তা পাঠান আতিকুর রহমান রাসেল। ইমেইল বার্তায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘তৃণমূলের মতামত না নিয়ে এবং অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে এই কমিটি অনুমোদন দেওয়ায় আমি ছাত্রদলের একজন কর্মী হিসেবে উক্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’
তিনি বলেন, ‘যোগ্যদের পদ বঞ্চিত করে চাটুকারদের পদ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের রাজনীতিকে বাগেরহাটে কবর দিতে এই কমিটি করা হয়েছে।’
পর দিন ফেসবুকে স্টাট্যাস লিখে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষনা জানান নতুন কমিটির জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি মো. গোলাম রসুল তরফদার । তিনি অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে তৃণমূলের কোন মতামত মূল্যায়ন করা হয়নি। কমিটতে সিনিয়র জুনিয়ার মেইন্টেইন করা হয়নি। মানা হয়নি তারেক রহমানের নির্দেশনা। তাই কেন্দ্র ঘোষিত এই কমিটিকে প্রত্যাখান করছি এবং জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’
এদিকে কমিটি দেওয়া কেন্দ্র করে বুধবার সন্ধ্যায় ছাত্রদলের পদ বঞ্চিত ক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ের সামনে দলের সভাপতি এম এ সালামের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মোল্লা সুজাউদ্দিন সুজনকে সভাপতি ও নূরে আলম ভূঁইয়া তানুকে সাধারণ সম্পাদক করে বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের ১৮১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সদ্য বিদায়ী সভাপতি সুজাউদ্দিন সুজন অভিযোগ করে বলেন, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে কারামুক্ত করতে হবে। সেই লক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনকে বেগবান করতে সম্প্রতি সারাদেশে ছাত্রদলের পুরানো কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে দলকে সাজাতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম তারেক রহমানের নির্দেশ উপেক্ষা করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবৈধ অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে অযোগ্যদের দিয়ে নিজের আজ্ঞাবহ কমিটি এনেছেন।
৯০’এর দশকের রাজপথ কাপানো জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাদেম নিয়ামুল নাসির আলাপ বলেন, বিএনপি’র বর্তমান জেলা কমিটিকে অযোগ্য ও নেতৃত্ব শূন্য। তাদের কাছে অযোগ্যরা যোগ্য হবে এটাই স্বাভাবিক। ছাত্রদলের যে নতুন কমিটি বাতিল করে যোগ্যদের নেতৃত্বে আনারও দাবি জানান তিনি।
পদবঞ্চিত বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্র দলের সভাপতি আবুল হাসান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, দল ও সংগঠনের আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকায় ১৮টি মামলা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের জন্য নিবেদিন কর্মীদের মূল্যায়ন না করে ওই কমিটি দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি আমরা মানি না। এটা কালো টাকার বিনিময় কেনা সালাম সাহেবের ‘পকেট কমিটি’। উপজেলা ও পৌর ইউনিটের কমিটিগুলোতে একই ভাবে করতে চাইছে তারা।
ছাত্রদলের এই কমিটি ঘোষনার পর আরও স্পষ্ট হয়েছে জেলা বিএনপির অভ্যন্তরিন কোন্দল। যার রেশ উঠে আসে বুধবার বিকালে শহরের একটি অভিযাত হোটেলে বাগেরহাট জেলা শ্রমিক দল আয়োজিত ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠানে। জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সরদার লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে ইফতার অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাধ্যে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সাবেক সাংসদ শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক সভাপতি এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলী বাবু, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম গোরা, খান মনিরুল ইসলাম মনি, জেলা বিএনপির সদস্য এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক, চিতলমারী উপজেলার সাবেক সভাপতি এ্যাড. মনোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সমম্পাদন ওয়ালিয়র রহমান পল্টু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ফারজানা জাহান নিপা, জেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি সুজা উদ্দিন মোল্লা সুজন প্রমুখ।
ওই ইফতারে অংশ নিয়ে দলের বেশি কয়েকজন নেতৃবৃন্দ জেলা বিএনপির সব কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি দেওয়ার আহ্বান জানান।
তবে নবগঠিত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলছেন, কমিটি খুবই ভালো হয়েছে। দীর্ঘদিন পর জেলা কমিটি দেওয়াতে সংগঠন চাঙ্গা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে জেলার ৯টি উপজেলা ও তিন পৌর সভার কমিটি ঘোষণার জন্য কাজ করছেন তাঁরা।
নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলী সাদ্দাম দ্বীপ মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, দীর্ঘদিন পর জেলা ছাত্র দলের নতুন কমিটি সংগঠনকে চাঙ্গা করবে। যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের দল মূল্যায়ন করেছে। এই কমিটি ছাত্র দলের কমিটি। এখানে জেলা বিএনপির কোন প্রভাব নেই। কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রদল বড় সংগঠন। এখানে অনেকেরই পদ পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। আমরা সবাইকে নিয়ে বসে এক সাথে কাজ করতে চাই। দুই একজন হয়তো ক্ষোভ থেকে ফেসবুকে পোস্টে দিয়েছে। সবাই মিলে বসে নিজের ভুল বোঝাবুঝির সমাধান করা হবে।
জেলা ছাত্রদলের নতুন সভাপতি মো. ইমরান খান সবুজ বলেন, বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে যারা মাঠে থেকেছে, ত্যাগি তাদের নিয়ে কমিটি হয়েছে। কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে। আমরা সবাইকে নিয়ে এক সাথে কাজ করতে চাই। আশাকরি ছোট বিষয়গুলো দ্রুতই সমাধান হবে।
ছাত্রদলের নব গঠিত কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, একটা দলের মধ্যে কমিটি হলে দেখা যায় একাধিক প্রার্থী থাকে। সবাই তো সভাপতি সেক্রেটারি হবেন না। তাই ক্ষোব থাকতেই পারে। আর আমি বিএনপির রাজনীতি করি, জেলা বিএনপির সভাপতি। ছাত্রদলের এই কমিটি তো আমি করি নাই। এটা তো কেন্দ্র থেকে তাদের করে দিয়েছে। এটাতে আমর কিছুই বলার নাই।’
এইচ/এসআই/বিআই/০৭ জুন, ২০১৮