স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সুন্দরবনের ভেতরে প্রায় দেড় মাস আগে ডুবে যাওয়া কয়লাবোঝাই লাইটার জাহাজটি উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার এমভি বিলাশ নামের ওই জাহাজটি কেটে দুই টুকরো করে তোলা হয়।
উদ্ধারের পর জাহাজটির দুটি অংশ টাক বোটের সাহায্যে টেনে দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১১ নটিক্যাল মাইল দূরে মোংলা উপজেলার কানাইনগরের বাইদ্দার চরে এনে রাখা হয়েছে।
গত ১৪ এপ্রিল রাতে মোংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়ার ৫ নম্বর অ্যাংকারের কাছে ডুব চরে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় এমভি বিলাশ। ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ডুবে যাওয়া নৌযানটি ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল।
দুর্ঘটনার পর থেকে নৌযানটি উদ্ধার কাজ তদারকি করছিলেন কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাহারা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. লালন হাওলাদার। মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকেই জাহাজটি উদ্ধারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলাম। অনেকেরই হয় তো ধারণা ছিল আমরা জাহাজটিকে তুলবো না। সময় ক্ষেপণ করছি, আসলে এখানের বাস্তবতা ভিন্ন ছিল। বৈরী আবহাওয়া এবং নদীতে পানির চাপ বেশি থাকায় উদ্ধার কাজে খুব কঠিন ছিল। মাঝে ঝড় ও বর্জবৃষ্টির কারণে কিছু দিন উদ্ধার কাজ বন্ধও রাখতে হয়।
সুন্দরবনের ভেতরে কয়লাবোঝাই জাহাজ ডুবির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বন বিভাগ ও পরিবেশবিদরা। নৌযানটি উদ্ধারে গত ২৪ এপ্রিল স্থানীয় উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হোসেন স্যালভেসের সঙ্গে চুক্তি করে কয়লা আমদানিকারক।
হোসেন স্যালভেজের মালিক মো. সোহরাব হোসেন মোল্লা বলেন, শুরুতে আমরা কয়লা কয়লা তুলে জাহাজটি হালকা করে তা টেনে তোলার চেষ্টা করি। নদীতে প্রবল স্রোত ও ঝড়বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ বিঘ্নিত হচ্ছিল।
‘উদ্ধারের ওই চেষ্টা কয়েক দফা চেষ্টা ভেস্তে যায়। সপ্তাহ খানেক আগে জাহাজটির মাঝ দিয়ে ফাঁটল দেখা দিলে নৌযানটি কেটে দুই ভাগ করে পশুর নদ থেকে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চট্টগ্রামের থেকে দুটি বার্জ এনে কেটে জাহাজটিকে টেনে মংলার কাইনমারী খালের মুখে রাখা হয়েছে।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ডুবে যাওয়া এমভি বিলাশ জাহাজটিকে দুই টুকরো তোলার পর হাড়বাড়িয়া থেকে প্রায় ১১ নটিক্যাল মাইল দূরে মোংলার কানাইনগর বাইদ্দার চরে এনে রাখা হয়েছে।
এরআগে ডুবে থাকা জাহাজ থেকে পানি পলিমাটি মিশ্রিত কিছু কয়লা পাম্পের মাধ্যমে উত্তোলন করে ৪০০ টনের একটি বাল্কহেডে করে যশোরের নওয়াপাড়ায় নিয়ে যান আমদানিকারকেরা। এখনো জাহাজের সামনের অংশে ভেতরে কিছু কয়লা রয়েছে।
মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র ও বন্দরের স্টিভিডরস জুলফিকার আলী বলেন, মোংলা বন্দরের নৌ-চ্যানেল পশুর নদটি সুন্দরবনের মধ্যে। বর্তমান সময়ে মোংলা বন্দরে দেশি-বিদেশি জাহাজ আসার সংখ্যা বেড়েছে। সে জন্য দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়েছে। তবে খুলনা অঞ্চলে বিআইডব্লিউটিএর, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের আধুনিক কোনো উদ্ধারকারী জলযান নেই। ফলে কোনো জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়লে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে। ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ঘটনার শঙ্কাও বেড়ে যায়।
এক প্রশ্নের জাবাবে মো. লালন বলেন, দুর্ঘটনা যে কোন সময় ঘটতেই পারে। কিন্তু তা মোকাবেলায় বন্দরের কী সুযোগ-সুবিধা আছে? দুর্ঘটনা ঘটলেও তো উদ্ধারের জন্য তেমন কোনই নৌযান নেই। এমনকি নৌপথটিও সঠিক ভাবে মার্কিং বয়া নেই। মুলত ডুব চরের কারনে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বন্দর ব্যবহারের জন্য আমরা সরকারকে রাজস্ব দেই। কিন্তু তারা তো কোন সুযোগ সুবিধাই দিচ্ছে না।
‘তারা (বন্দর কর্তিপক্ষ) যদি ডুবচরগুলো সঠিক ভাবে মার্কিং না করে, প্রয়োজন অনুযায়ী উদ্ধারকারী সরঞ্জামাদী সংগ্রহ না করে তবে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
সুন্দরবনের মাঝে বার বার এ ধরণের দুর্ঘটনায় উদ্বেগ জনিয়ে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, এরআগেও সুন্দরবনের মাঝে প্রতিটি দুর্ঘটনার পর নৌযান উদ্ধারে করতে দেড় থেকে দুই মাসের সময় লেগেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে সুন্দরবন একটি সংবেদনশীল বন। এর নদ-নদীতে ইরাবতী ডলফিনের বাস। এই ম্যানগ্রোভ বনে বৃক্ষরাজি ও পরিবেশও ঝুঁকির মুখে পড়ে এসব দুর্ঘটনায়।
‘কিন্তু সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রতিটি জাহাজডুবির পরই আমরা সংশ্লিষ্ট সবার উদাসীনতা দেখি। পত্রপত্রিকাতে লেখালেখির কারণে কিছুদিন তৎপরতা দেখা যায়। এরপর সব আবারও যা তাই হয়ে যায়। এখানে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে বন্দরকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধারে কাজ করতে হবে। এজন্য তাদের স্বক্ষমতা বড়াতে হবে।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ কে এম ফারুক হাসান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে বন্দরের জন্য নিজস্ব উদ্ধারকারী নৌযান কেনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বছরই আমরা একটি ওয়েল স্পিল রেসপন্স/রিকভারি ভ্যাসেল কিনেছি।’
বন্দরের জন্য উদ্ধারকারী জাহাজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য তারা একটি প্রকল্প তৈরি করছেন।
এইচ//এসআই/বিআই/৩১ মে ২০১৮