স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে নারী চিকিৎসককে শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মৌসুমী ইয়াসমিনের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধরেন। এ সময় আরেক পুরুষ চিকিৎসককেও মারধর করা হয়।
ওই নেতার নাম ফকির রেজাউল করিম। তিনি ফকিরহাট উপজেলার মানসা বাহিরদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
গত বুধবার ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১১ মে) বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একই দিন উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায়ও ওই ঘটনা আলোচিত হয়।
ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মৌসুমী ইয়াসমিন বলেন, বুধবার বেলা দুইটার দিকে ফকির রেজাউল করিমের স্ত্রী ঝর্ণা বেগমের শ্বাসকষ্ট বাড়লে তাঁকে নিয়ে রেজাউলের সহযোগী আনোয়ার হোসেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। আমি এ সময়ে মারপিটে আহত অপর এক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ছাড়পত্র লিখছিলাম। আমি ছাড়পত্র লেখা বন্ধ রেখে ঝর্ণা বেগমকে প্রথমে অক্সিজেন দিই। একটু পরে আমার সহকর্মী অভিজিৎ মৃধা এসে ওই রোগীর পেশার মেপে কম পান। আমরা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করি।
‘এর কিছুক্ষণ পরে রোগীর স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা ফকির রেজাউল করিম সেখানে পৌঁছে কোনো কথা ছাড়াই আমার গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে রাখেন এবং হাত চেপে ধরেন। অনেক জোরাজুরির পর আমি দৌড়ে রক্ষা পাই। আরেকটু সময় ওড়না প্যাঁচানো থাকলে নিশ্চিত আমার মৃত্যু হতে পারত।’
মৌসুমী ইয়াসমিন অভিযোগ করেন, ‘আমি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়। এ ঘটনা পর থেকে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
আরেক চিকিৎসক অভিজিৎ মৃধা অভিযোগ করেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান ফকির রেজাউল করিমের অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। আনোয়ার ১০ বছর ধরে এই হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহ করে আসছিলেন। চলতি অর্থবছরে তাঁর ঠিকাদারি চলে যায়। এরপর থেকে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম প্রথমে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৌসুমী ইয়াসমিনকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধরে। এই দেখে আনোয়ার হোসেন উৎসাহী হয়ে আমাকে কিল-ঘুষি মারেন।’
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন অরুণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘রেজাউল করিম চিকিৎসক মৌসুমী ইয়াসমিনকে বিনা অপরাধে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেছেন; যা ক্ষমার অযোগ্য। অথচ ওই চিকিৎসক তাঁর স্ত্রীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি। প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
ফকিরহাটের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াঙ্কা পাল বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাই এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। ঘটনাটি স্থানীয় সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দিনকে অবহিত করেছি। তিনি ১২ মে তিনি ফকিরহাটে আসবেন। সেদিন পরবর্তী করণীয় ঠিক করার আশ্বাস দিয়েছেন সাংসদ।
মামলা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঘটনা জানার পর পুলিশ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। ঘটনার সত্যতা মিলেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফকির রেজাউল করিম বুধবার রাতে মুঠোফোনে বলেন, ‘গায়ে হাত তোলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই নারী চিকিৎসকের সঙ্গে আমার তর্কাতর্কি হয়েছে। এ সময় আমার সমর্থকেরাও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তবে তারাও কারও গায়ে হাত তোলেনি।
আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়ার পর এক ঘণ্টাও তেমন কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তাই রাগারাগির ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ধামাচাপা দিতেই তাঁরা উল্টো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। আমি স্ত্রীকে খুলনায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি।’
এইচ//এসআই/বিআই/১০ মে ২০১৮