স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সড়ক দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বাগেরহাট জেলা শাখার সভানেত্রী শিল্পী সমাদ্দারের।
টিআইবি’র একটি জাতীয় সম্মেলন থেকে ফেরার পথে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার পোনা এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। ওই দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছেন; আহত হন আরও অন্তত ২৫ জন।
বাগেরহাট শহরের আমলাপাড়ার জীতেন সমদ্দারের মেয়ে শিল্পী সমাদ্দার (৬৫) আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন।
শিক্ষাকতা ছাড়াও তাঁর পদচারণা ছিল বাগেরহাটে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। বাগেরহাটের প্রগতিশীল আন্দোলনের সাহসী প্রেরণা ছিলেন শিল্পী সমাদ্দার। সদস্য ছিলেন বাগেরহাট সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র জেলার শাখার।
‘শিল্পী দি’ নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন সবার কাছে। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় শহরের আমলাপাড়ার বাড়িতে। এ সময় সেখানে ছুটে যান বাগেরহাটে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ।
শহরের শালতলা কেন্দ্রিয় হরিসভা মন্দির, মহিলা পরিষদ হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় দীর্ঘদিনের কর্মস্থল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শুকলাল সংগীত বিদ্যাপীঠ হয়ে মরদেহ নেওয়া হয় সিপিবি কার্যালয়ে। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ৩ ফেব্রুয়ারি শহরের আমলাপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ তিনি। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে শিল্পী সমাদ্দার ছিলেন সবার বড়। বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন সরকারি পিসি কলেজে। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশায়।
ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। শহরের আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ছিল সরব উপস্থিতি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।
সন্ধ্যায় শহরের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শোক সন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
টিআইবি’র বাগেরহাট কার্যালয়ের এরিয়া ম্যানেজার শেখ বশির আহমেদ বলেন, গত সোমবার অনুষ্ঠিত সনাক-সজন, ইয়েস-ইয়েস ফ্রেন্ডস এবং ওয়াইপ্যাক জাতীয় সম্মেলনে যোগদিতে ঢাকায় গেছিলেন বাগেরহাট সনাকের সদস্য শিল্পী সমাদ্দার। তিনিসহ বাগেরহাট সনাকের ৩৯ সদস্যের একটি দল টিআইবি’র ওই জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে গোপালগঞ্জে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
“দুর্ঘটনা কবলিত ওই বাসটিতে বাগেরহাটের ১৫জন সনাক, সজন, ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্য ছিলেন। অন্যদের অবস্থা আশঙ্কা মুক্ত।”
সিপিবি’র বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল বলেন, শিল্পী দি’র এই অকাল মৃত্যুতে বাগেরহাটের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর জীবন কেটেছে মানুষের সেবায়। তাঁরই হাত ধরে শহরের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা লাভ।
“সকলের প্রিয় সদালাপী ‘শিল্পী দি’র এই শূন্যতা পুরণ হবার নয়। তাঁর অকাল প্রয়াণে আমরা শোকাহত।”
মুকসুদপুর সার্কেল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে বাগেরহাটগামী বাসটির সঙ্গে বিপরীতমুখী একটি ইটবোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুটি বাহনই রাস্তার পাশে একটি খাদে পড়ে যায়।
দুইজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ গিয়ে বাসের আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। পথে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়।”
নিহত অপর তিনজন হলেন- ইট-বালু ব্যবসায়ী কাশিয়ানী উপজেলার ভুধপাশা গ্রামের রুলু মোল্লার ছেলে শাহজাহান মোল্লা (৫০), ট্রাক চালকের সহকারী একই গ্রামের বরকত তালুকদারের ছেলে সোহাগ তালুকদার (১৮) ও বাস চালকের সহকারী নয়ন (২৫)।
এইচ//এসআই/বিআই/২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮