নিউজ এডিটর | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
যেখানে হাত দিয়েই অনেক জিনিসের ভারসাম্য রাখা কঠিন। সেখানে পা দিয়েই আস্ত একটা ড্রামের ভারসাম্য রক্ষা করা! আবার সেই ড্রামের ওপর ছোট একটি ছেলেকে দাঁড় করিয়ে রাখা!
শুধু কি দাড় করিয়ে রাখা? সেই ছেলেটিকে নিয়েই পায়ের ওপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ড্রামটির প্রতিটি প্রান্ত ছুঁয়ে গেলেন অ্যাক্রোব্যাট শিল্পী মিজানুর রহমান। ড্রামের ওপর দাঁড়ানো আব্দুল আহাদও কম যায় না। ভয় তো দূরের কথা, মিজানুর যখন ড্রামের প্রান্ত পরিবর্তন করছিলেন, আহাদ তখন তার ওপর দাঁড়িয়ে উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিচ্ছিল দর্শকদের উদ্দেশে।
মিজানুর-আহাদের এই অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী দেখে মাঠভর্তি দর্শক ‘থ’। পিনপতন নীরবতা যাকে বলে। গত শনিবার রাতে বাগেরহাট সদরের ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে হয়ে গেল মনমুগ্ধকর সব অ্যাক্রোবেট শৈলী।
আগুন নিয়ে খেলা, ব্যারেল ব্যালেন্স, রিং নৃত্য একের পর এক পরিবেশনায় চোখের পাতাও ফেলতে পারেনি দর্শকেরা। ‘শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ’ স্লোগানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করে এই প্রদর্শনীর।
বাবার সাথে মাজার মোড়ের ওই মাঠে প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন ৫ম শ্রেণির ছাত্র মেহরাব হোসেন। তিনি বলেন, আমার খুব ভালো লাগছে। আমি বিদেশি চ্যানেলে এই খেলা দেখেছি। আজ সামনা সামনি দেখে খুবই আনন্দ লাগছে।
স্কুল শেষ করে বিকেলেই প্রদর্শনী দেখতে মাঠে চলে আসেন পার্শবর্তি খানজাহানীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী শ্রবণী মজুমদার। প্রদর্শনী শেষের পরও মঞ্চের পাশে দাড়িয়ে ছিল সে। চোখে মুখে উৎচ্ছ্বাস নিয়ে শ্রাবণী বলেন, ‘এতো সুন্দর সার্কাস আগে কখনও দেখিনি। আমরা স্কুলের অনেক বন্ধু এখানে ছিলাম। এমন খেলা যেন প্রতি বছর হয়।’
আড়াই ঘন্টা ধরে চলা একের পর এক চোখধাঁধানো সব কসরত চলছিল মাঠে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে। শিল্পীরা কখনো তৈরি করছিলেন মানবপ্রাচীর। কখনোবা তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে চার-পাঁচজন উঠে ঝুলে রইলেন।
ছিল ‘হ্যান্ড স্কিল’, ‘আংকারাসা’, ‘ব্রিক স্কিল’, ‘ওয়্যার ব্যালেন্স’, ‘চেয়ার সেটিং’, ‘রোপ জাম্প’, ‘রিং নৃত্য’, ‘জলি সিমেন্স’ শিরোনামের পরিবেশনা।
ঝুঁকিপূর্ণ হলেও শিল্পীদের দক্ষ পরিবেশনায় মুগ্ধ দর্শকেরা বলছেন, এ এক নির্মল বিনোদন। মুহুর মুহুর করতালিতে তার অভিনন্দিত করছেন অ্যাক্রোবেট শিল্পীদের।
অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তানজিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের বাইরেও বিভিন্ন অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী দেখার সুযোগ হয়েছে। আমি বলতে পারি তাদের চেয়ে আমাদের দেশের শিল্পীদের এই প্রদর্শনী কোন অংশেই কম নয়। আমরা এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী দেখলাম।
গৃহীনি ঝুমুর বিশ্বাস বলেন, আমি শুরু থেকে সবগুলো খেলা দেখেছি। এতো সুন্দর খেলা আগে কখনও দেখিনি। সবগুলোই অনেক সুন্দের হয়েছে। আমার বাচ্চাদেরও নিয়ে এসেছি। ওরাও খুব আনন্দিত।
শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতায় আবুল মজিদ, নাসের, ফকের আলী, কালিম শেখ, আকলিমা আক্তার, পুতুল, আমেনা, গোলাম মাওলাসহ বাংলাদেশ অ্যাক্রোবেটিক দলের ২৫ জন সদস্য পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪ জেলায় পরিবেশন করছেন এই প্রদর্শনী।
দলের সমন্বয়কারী প্রধান মূসা রুবেল জানান, বাগেরহাটে এটি তাদের ৩০৪ তম প্রদর্শনী। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের অধিকাংশের বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়। মোট ১৯টি খেলা প্রদর্শন করেন শিল্পিরা।
ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, এ ধরনের প্রদর্শনী কেবল টেলিভিশন ও বড় বড় শহর কেন্দ্রীক ছিল। সেখানে তৃণমূল পর্যায়ে এমন আয়োজন করায় শিল্পকলা একাডেমিতে ধন্যবাদ জানাই।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমার বিশ্বস এই প্রদর্শনী আমাদের গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজ মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদের মত পথে না গিয়ে ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা পাবে।
জেলা কালচারাল অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে সুস্থ সংস্কৃতিক চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সারাদেশে এই প্রদর্শনীর আয়োজন। জেলা শহরসহ পর্যায়ক্রমে ৪৯৩টি উপজেলায় প্রদর্শনীর পরিকল্পনা রয়েছে।
এইচ//এসআই/বিআই/২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮